বাঁচাইল। তাহার পর হইতে আর মহর্ষির শরভের আহার জোটে না। বেচারা দিন কতক উপবাস করিয়া কাটাইল, তারপর ক্ষুধার জ্বালায় তাহার প্রাণ যায় যায়। তখন সে তাহার শুকনো ঠোঁট চাটতে চাটতে ভাবিল, আর ত জন্তু নাই। তবে মুনি-ঠাকুরকেই খাইব নাকি?”
মুনি যে ত্রিকালজ্ঞ ছিলেন, বোকা শরভ তাহা জানিত না। সে মুনিকে খাইবার কথা মনে করিবামাত্র, তিনি তাহা টের পাইয়া বলিলেন, বটে রে, হতভাগা? তবে তুই যে কুকুর ছিল, আবার সেই কুকুর হ!
বলিতে বলিতেই সেই শরভ আবার কুকুর হইয়া হেঁট মুখে মুনির সামনে আসিয়া লেজ নাড়িতে লাগিল। কিন্তু মুনি তাহাকে আর পূর্বের ন্যায় আদর না করিয়া বলিলেন, ‘দূর হ হতভাগা। আমার এখানে আর তোর স্থান নাই।
তিন মাছের কথা
কোন এক পুকুরে তিনটি শোল মাছ ছিল। তাহাদের একটির নাম ছিল অনাগত বিধাতা', সে কোন বিপদ হইবার আগেই তাহার উপায় করিয়া রাখিত। আর একটির নাম ছিল ‘প্রত্যুৎপন্নমতি। তাহার খুব বুদ্ধি ছিল, কোন বিপদ উপস্থিত হইলে সে ঢের বুদ্ধি খাটাইয়া তাহা দূর করিত। আর একটির নাম দীর্ঘসূত্র। সে কোন বিপদের কথা জানিতে পারিলেও আজ নয় কাল, করিয়া সময় কাটাইত, কাজেই বিপদ আসিয়া উপস্থিত হইলে আর তাহার বিপত্তির সীমা থাকিত না।
একদিন একদল জেলে আসিয়া মাছ ধরিবার জন্য সেই পুকুরের জল সিঁচিতে আরম্ভ করিল। তাহা দেখিয়া অনাগত বিধাতা’, ‘প্রত্যুৎপন্নমতি আর দীর্ঘসূত্র’কে ডাকিয়া বলিল, ‘ভাই, বড়ই ত বিপদ উপস্থিত দেখিতেছি। ঐ দেখ, বিকটাকার জেলেরা আসিয়া পুকুরের জল সিঁচিতে আরম্ভ করিয়াছে। দুদিনের ভিতরেই এই পুকুর শুকাইয়া যাইবে, তারপর জেলেরা আমাদিগকে ধরিয়া লইয়া যাইবে। চল, আমরা এই বেলা এখান হইতে পলাই। এখনো পলাইবার একটি পথ আছে জল শুকাইয়া গেলে আর সেটি থাকিবে না।
এ কথা শুনিয়া দীর্ঘসূত্র’ বলিল, “আমি ভাই অত তাড়াহুড়ো করিতে পারিব না। এখনই হইয়াছে কি? একটু দেখা যাউক না।
প্রত্যুৎপন্নমতিও বলিল, এত আগেই ভয় পাইবার দরকার কি? যখন বিপদ আসিবে, তখন যা হয় করা যাইবে।
কাজেই ‘অনাগত বিধাতা’, বুঝিল যে, ইহাদের এখন যাইবার মত নাই। তখন সে আর তাহাদের জন্য অপেক্ষা না করিয়া, সেই পথটি দিয়া অন্য একটা জলাশয়ে চলিয়া গেল।
এদিকে জেলেরা এমনি উৎসাহের সহিত জল সিঁচিতে আরম্ভ করিল যে, পুকুর শুকাইতে আর বেশি বিলম্ব হইল না। তখন তাহারা দড়ি আনিয়া এক-একটি করিয়া মাছ ধরিয়া তাহাতে গাঁথিতে লাগিল। শুকনো পুকুরের মাছ আর কোথায় পলাইবে? কাজেই বেচারারা বুঝিতে পারিল যে, এ যাত্রা আর কাহারো রক্ষা নাই।