সেই আগুনে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়াছে। তখন সে সেই আগুনের ভিতর যে আশ্চর্য ব্যাপার দেখিতে পাইল, তাহার কথা বলি, শুন। সে দেখিল, তাহার পায়রা পরম সুন্দর দেহ ধারণ পূর্বক, দিব্য অলঙ্কার, মালা, চন্দন, আর উক্ত বসনের শোভায় সোনার রথ আলো করিয়া বসিয়া আছে আর স্বর্গ হইতে পুণ্যবানেরা আসিয়া তাহার স্তব করিতেছেন। তারপর পায়রীও তাহার সঙ্গে সেই রথে চড়িয়া হাসিতে হাসিতে স্বর্গে চলিয়া গেল।
সেই সময়ে সেই ব্যাধ উপরের দিকে চাহিয়া পায়রা ও পায়রীর সেই সুন্দর রথ দেখিতে পাইয়াছিল। তখন তাহার মনে হইল যে, যে পুণ্য কাজ করিয়া এমন সুখ লাভ করা যায়, এরপর সেই পুণ্য কাজ ভিন্ন আর সে কিছুই করিবে না।
তখন হইতে সেই ব্যাধ পরম ধার্মিক তপস্বী হইল। সে এক মনে এক প্রাণে কেবলই ভগবানের চিন্তা করিয়া বনে বনে ফিরিত। সেই বনের ভিতরে একদিন ভীষণ দাবানল জ্বলিয়া উঠিল। তপস্বী তাহা দেখিয়া ভয়ও পাইল না। পলায়নও করিল না; সে ভগবানের নাম লইয়া হাসিতে হাসিতে সেই আগুনে ঝাঁপ দিয়া পড়িল। তাহার ভক্তিতে তুষ্ট হইয়া দেবতারা তাহাকে পরম আদরের সহিত স্বর্গে গেলেন; সে এককালে ব্যাধ ছিল বলিয়া তাহাকে ঘৃণা করিলেন না।
ডাকাত ব্রাহ্মণ ও ধার্মিক বক
প্রাচীনকালে গৌতম নামে এক অতি মুর্খ ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ ছিল। সে দেশে দেশে ভিক্ষা করিয়া বেড়াইত। ভিক্ষা করিতে করিতে, সে উত্তর দেশে এক ডাকাতের বাড়িতে উপস্থিত হইয়া দেখিল যে, সেই ডাকাত তাহার লোক জনকে বড়ই সুখে রাখিয়াছে। খাওয়ায় পরায়, আমোদ আহ্লাদে তাহাদের সৌভাগ্যের আর সীমা নাই।
ব্রাহ্মণ সেই ডাকাতের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, “আমাকে বাড়িঘর দাও, আর এক বৎসরের খোরাক দাও; আমি তোমার গ্রামে বাস করিব।”
ডাকাত বলিল, “ঠাকুর, আপনার বড়ই দয়া!” সে তখনই বাড়ি, ঘর, খোরাক, পোশাক দিয়া ব্রাহ্মণকে পরম আদরে তাহার গ্রামে রাখিয়া দিল।
তারপর দিন যায়, মাস যায়, গৌতম ঠাকুরের আর ডাকাতের বাড়ি ছড়িতে ইচ্ছা হয় না। তাহার মনে হইল যে, সন্ধ্যা তর্পণে বড়ই কষ্ট, ভিক্ষা করাও নিতান্ত নির্বোধের কাজ। সুতরাং ভিক্ষা করিয়া কেন মরিব? তাহা হইতে হয়ত ডাকাত হওয়াই ভাল!
অল্পদিনের ভিতরেই সেই ব্রাহ্মণ ডাকাতের মেয়ে বিবাহ করিয়া, তীর ধনুক শিখিয়া, বিকট চেহারা করিয়া, মস্ত ডাকাত হইয়া গেল, তাহার মত শিকার করিতে কেহই পারিত না। যখন ডাকাতি করিতে না যাইত, তখন কেবল পাখি মারিয়াই সময় কাটাইত।
গৌতমের এক পরম ধার্মিক এবং পণ্ডিত ব্রহ্মচারী বন্ধু ছিলেন। সেই বন্ধু অনেকদিন গৌতমের কোন সংবাদ না পাইয়া, দেশে দেশে তাহার সন্ধান করিতে করিতে, দস্যুদিগের গ্রামে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।
সেখানে আসিয়া সেই ধার্মিক তপস্বী দেখিলেন যে, তাহার ছেলেবেলার প্রিয় বন্ধু মরা