পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬৫১

 রাজ-আজ্ঞায় রাক্ষসগণ অতি ভীষণ পট্টিশের আঘাতে সেই দুরাত্মার দেহ খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিল;কিন্তু এমন মহাপাপীর মাংস খাইতে তাহারা কিছুতেই সম্মত হইল না। রাজা তখন নিতান্ত নীচাশয় মানুষখেকো দস্যুদিগকে ডাকিয়া, সেই মাংস খাইতে বলিলেন। কিন্তু তাহারাও সেই দুরাচারের জঘন্য মাংস খাইতে মুখ সিটকাইয়া অস্বীকার করিল।

 তারপর সুগন্ধি কাঠের সুসজ্জিত চিতা প্রস্তুত করিয়া, সকলে অতিশয় যত্ন ও স্নেস্ত্রে সহিত রাজধর্মের দেহ দাহ করিতে আরম্ভ করিলে, সেই বকের মাতা সুরভি স্বর্গ হইতে ঠিক সেই চিতায় উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার মুখ হইতে ক্রমাগত অমৃত তুল্য দুগ্ধ এবং ফেনা বাহির হইতেছিল। সেই ফেনা বকের শরীরে পড়িবামাত্র, সে চিতা হইতে উঠিয়া বিরূপাক্ষের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল!

 তখন সকলের আর আনন্দের সীমা কি? দেবতারা পর্যন্ত আনন্দ করিতে আসিয়া বিরূপাক্ষকে ধন্যবাদ দিতে লাগিলেন। সেই সময়ে ইন্দ্র বলিলেন, “ব্রহ্মার সভায় যাইতে অবহেলা করায় তিনি রাজধর্মকে এই বলিয়া সাপ দেন যে, তুমি অতি দীর্ঘকাল বাঁচিয়া থাকিবে। এইজন্য আর সুরভির দুগ্ধের ফেনের গুণে, আজ সে মরিয়াও রক্ষা পাইল।”

 রাজধর্ম তখন ইন্দ্রকে প্রণাম করিয়া বিনয়ের সহিত বলিল, “দেবরাজ, আমার প্রতি যদি আপনার দয়া হইয়া থাকে, তবে আমার বন্ধু গৌতমকে আবার বাঁচাইয়া দিন।”

 এ কথায় ইন্দ্র তখনই গৌতমকে বাঁচাইয়া দিলেন বটে, কিন্তু সেই মহাপাপীর আর কিছুতেই ধর্মে মতি হইল না, সুতরাং মৃত্যুর পরে সে নরকে গিয়া তাহার সকল পাপের উচিত পুরস্কার লাভ করিল।


কৃতজ্ঞ শুকপক্ষী

 পূর্বকালে এক ব্যাধ ছিল, সে ভয়ানক বিষ মাখান বাণ মারিয়া, বনের জন্তুদিগকে বধ করিত। একদিন তাহার একটি বাণ জন্তুর গায়ে না লাগিয়া, এক প্রকাণ্ড গাছে গিয়া বিঁধে। সেই সাংঘাতিক বিষের এমনই তেজ ছিল যে, তাহাতেই সেই বহুকালের পুরাতন বিশাল গাছটি মরিয়া গেল! যুগ যুগান্তর ধরিয়া কত শত পাখি সেই গাছে বাস করিত; গাছটি মরিয়া গেলে তাহারা সকলেই তাহাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল।

 সেই গাছের একটি কোটরে একটি শুকপক্ষী থকিত। সে সেই গাছটিকে শুকাইতে দেখিয়া, তাহার জন্য বড়ই দুঃখিত হইল। অন্য সকল পাখিকে সেই গাছ ছাড়িয়া যাইতে দেখিয়াও সে কিছুতেই তাহাকে পরিত্যাগ করিল না। এমন-কি, যখন গাছটি একেবারেই মরিয়া গেল, তখন সেই শুকপক্ষীটিও খাওয়া-দাওয়া ছাড়িয়া দিয়া, দিন রাত কেবল তাহার জন্য দুঃখ করিতে লাগিল।

 স্বর্গ হইতে দেবরাজ ইন্দ্র এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়া, সেই পক্ষীটির উপর এতই সন্তুষ্ট হইলেন যে, তিনি তাহার নিকট না আসিয়া আর থাকিতে পারিলেন না। শুকপক্ষী গাছের কোটরে বসিয়া চিন্তা করিতেছ, এমন সময় ইন্দ্র এক ব্রাহ্মণের বেশে সেখানে আসিয়া বলিলেন, “পক্ষিরাজ। তোমার মাতার বড়ই সৌভাগ্য যে, তিনি তোমার মত পুত্র লাভ