পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিয়াছিলেন। কিন্তু তুমি এই শুকনো গাছে কিজন্য বাস করিতেছ? অন্য একটা ভাল গাছে চলিয়া যাও।”

 শুক বড়ই বুদ্ধিমান ছিল; সে দেবরাজকে দেখিবামাত্রই চিনিয়া ফেলিল। সুতরাং, সে তাঁহাকে ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া বলিল, “দেবরাজ, আপনার আদেশ অমান্য করার সাধ্য আমার নাই। কিন্তু এই গাছটিতে জন্মবধি বাস করিয়া আমি এত বড় হইয়াছি! বৃক্ষরাজ পিতার ন্যায় আমাকে আশ্রয় দিয়া,কত বিপদ হইতে রক্ষা করিয়াছে তাহার সংখ্যা নাই। তাই এখন ইহার দুঃখের অবস্থায়, ইহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে আমার কিছুতেই ইচ্ছা হইতেছে না। এমন কাজ করা কি আপনি উচিত মনে করেন?”

 এ কথায় ইন্দ্র অতি তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “শুক, আমি তোমার কথায় বড়ই আনন্দিত হইয়াছি তুমি বর প্রার্থনা কর।”

 শুক বলিলেন, “দেবরাজ, যদি তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে এই বর দিন যে, আমার আশ্রয়দাতা এই গাছটি এখনই বাঁচিয়া উঠিয়া, পুনারায় ফুলে ফলে শোভা পাউক।”

 তখন ইন্দ্র আহ্লাদের সহিত তথাস্তু’ বলিয়া সেই গাছে অমৃত ছড়াইয়া দিলে, তাহা তৎক্ষণাৎ বাঁচিয়া উঠিয়া পূর্বের ন্যায় বনের শোভা করিতে লাগিল।


জুতা আর ছাতার জন্ম

 বহুকাল পূর্বে, একদিন জ্যৈষ্ঠ মাসের সকাল বেলায়, এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়াছিল।

 জমদগ্নি মুনি তীর ছুঁড়িতেছে, রেণুকা তাহা কুড়াইয়া আনিতেছেন, মুনি ভাবিতেছেন, এ খেলার বড়ই আমোদ;তাই আজ আর তাঁহার অন্য কাজের কথা মনে নাই, তিনি ক্রমাগত খালি তীরের উপর তীরই ছুঁড়িতেছেন। এদিকে বেলা যে ঢের হইযাছে, রোদে যে তালু ফাটিয়া গেল, মাটি যে তাতিয়া আগুন, সে কথা কে ভাবে? মুনির আজ তীর ছুঁড়িয়া বড়ই ভাল লাগিয়াছে।

 বেচারী রেণুকা একেবারে সারা হইয়া গেলেন, তাঁহাব মাথা ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে, পায় ফোস্কা হইয়াছে, প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু মুনির সেদিকে দৃষ্টি নাই। তাঁহার আজ বড়ই আমোদ হইয়াছে, তাই তিনি খালি তীরই ছুঁড়িতেছে, আর বলিতেছেন, “রেণুকা শীঘ্র আন! দেরি করিতেছ কেন?”

 কিন্তু রেণুকা আর পারেন না। একটু ছায়ায় দাঁড়াইয়া বিশ্রাম না করিলে এখনই হয়ত তাঁহার প্রাণ যাইবে। তাই তিনি মুহূর্ত কালের জন্য একটি গাছের তলায় দাঁড়াইলেন, তাহার পরের মুহূর্তেই ছুটিয়া মুনির কাছে উপস্থিত হইলেন।

 ইহাতেই মুনির রাগের সীমা নাই। তিনি ভূকুটি করিয়া বলিলেন, “এত বিলম্ব হইল কেন?

 রেণুকা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, নিতান্ত কষ্টের সহিত বলিলেন, “বড় রোদ। মাথা জ্বলিয়া গেল। একটু গাছতলায় দাঁড়াইযাছিলাম!”

 তখন মুনির চৈতন্য হইল। তিনি দেখিলেন, সত্য সত্যই রেণুকা রৌদ্রে নিতান্ত কাতর