হইয়া বলিলেন, “এইবার ঠিক সারথি হইয়াছে।”
সেই রথে চড়িয়া শিব যুদ্ধ করিতে চলিলেন, সঙ্গে দেবতা গন্ধর্ব সকলে জয় জয় শব্দে ছুটিয়া চলিল। ষাঁড়ে চড়িয়া নন্দী চলিল, ময়ুরে চড়িয়া কার্তিক চলিলেন, ঐরাবতে চড়িয়া ইন্দ্র চলিলেন, সাপে চড়িয়া বরুণ চলিলেন, মহিষে চড়িয়া যম চলিলেন। শিবের যত ভূত, তাহারাও শিবের রথ ঘিরিয়া গর্জন করিতে করিতে চলিল, হাতির মতো, পাহাড়ের মতো তাহাদের শরীর, মেঘের মতো তাহাদের ডাক।
এদিকে অসুরেরা এ সকল দেখিয়া শুনিয়া বড়ই ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। ময় তাড়াতাড়ি অসুরদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, “সাবধান, সাবধান। ঐ দেখ দেবতারা যুদ্ধ করিতে আসিতেছে। দেখিয়ো, যেন উহাদিগকে সহজে ছাড়িয়ো না।”
এমনি করিয়া ক্রমে দেবতা আর অসুরদিগের ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। অসুরগুলি দেখিতে যেমন ভয়ংকর, শিবের ভূত সকলও তেমনি বিকট; আর তাহাদের যুদ্ধও হইল বড়ই সাংঘাতিক। অসুরেরা মনে করে যে তাহারা দেখিতে ভারি সুন্দর, তাই ভূতগুলির জানোয়ারের মতো মুখ দেখিয়া, তাহারা আর হাসি রাখিতে পারে না।
সেই ভূতদের সঙ্গে খানিক যুদ্ধ করিলেই আবার তাহাদের সে হাসি শুকাইয়া যায়। তবুও অসুরেরা যেমন তেমন যুদ্ধ করে নাই। ময় আর তারক দুজনে নানারূপ মায়া খেলাইয়া ভূত আর দেবতা সকলকেই যারপরনাই ব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল। কোথা হইতে যে তাহারা যত রাজ্যের আগুন, আর বৃষ্টি, আর ঝড়, আর বাঘ, আর সাপ, আর কুমীর আনিয়া দেবতাদের উপর ফেলিতে লাগিল, তাহা কেহই বুঝিতে পারিল না। তথাপি ক্রমে দেবতাদেরই জয় হইতে লাগিল, নন্দীর হাতে বিদ্যুম্মালী মারা গেল, আর সকল অসুরই কাবু হইয়া পড়িল। তখন ময় দেখিল যে এখন একবার দুর্গের ভিতরে গিয়া একটু বিশ্রাম না করিলে আর চলিতেছে না।
দুর্গের ভিতরে আসিয়া ময় ভাবিতেছে, এখন উপায় কি হয়? এমন দুর্গ করিয়াও দেবতাদের হাতে শেষে এত নাকাল হইতে হইল। বলিতে বলিতে চট্ করিয়া তাহার মাথায় বুদ্ধি জোগাইয়াছে, আর অমনি সে মায়ার বলে দুর্গের ভিতরে এক আশ্চর্য পুকুর তৈয়ীর করিয়া ফেলিয়াছে। সে পুকুরের জল অমৃত, সে জল একবার খাইলে বা তাহাতে স্নান করিলে মরা যে সেও বাঁচিয়া উঠে।
তখন আর কিসের ভয়? যত অসুর মরে, সকলকেই আনিয়া সেই পুকুরে স্নান করায়। এমনি করিয়া তাহারা বিদ্যুন্মালীকে আবার বাঁচাইয়া তুলল আর কত মরা অসুর যে বাঁচাইল তাহার তো লেখা জোখাই নাই। বাঁচিয়া উঠিয়াই তাহারা আবার বলিল, “কোথায় গেল শিব? কোথায় নন্দী? কোথায় দেবতা? কোথায় ভূত? মার তাহাদের সকলকে।”
এবারে দেবতারা বড়ই সংকটে পড়িলেন। যত অসুর মারেন, সকলেই খানিক পরে আবার আসিয়া যুদ্ধ করিতে থাকে। একি আশ্চর্য ব্যাপার। মরিয়াও মরে না, বরং তাহাদের গায়ের জোর যেন আরো বাড়িয়া যায়। দেবতাগণ আর ভাবিয়া পথ পাইতেছেন না।
এমন সময় শিবের একটা ভূত ছুটিয়া আসিয়া বলিল, “কর্তা, অসুর মারিয়া আর কি হইবে? এদের ঘরে পুকুর আছে, তাহর জলে চোবাইলে মরাটি চাঙ্গা হয়।”
অসুরেরা তখন বড়ই ভয়ানক যুদ্ধ করিতেছিল। দেবতারা একে ইহাদের জ্বালায় অস্থির,