পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৬১

তাহাতে আবার শিবের রথের চাকা মাটিতে বসিয়া গিয়াছে, সকলে প্রাণপণে টানাটানি করিয়া তাহাকে তুলিতে পারিতেছেন না। তখন যদি বিষ্ণু তাড়াতাড়ি এক বিশাল ষাঁড় সাজিয়া শিং দিয়া সেই রথ না উঠাইতেন, তবে না জানি সেদিন কি সর্বনাশই হইত। ইহারই মধ্যে তারকাসুর ঝড়ের মতো ছুটিয়া আসিয়া ব্রহ্মাকে এমনি গুঁতা মারিয়াছিল যে, তিনি হাতের রাশ রথে ফেলিয়া কেবলই হাঁপাইতেছিলেন।

 এদিকে বিষ্ণু রথখানিকে শিং দিয়া উঠাইয়া দিয়াই অসুরদিগের দুর্গের দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। অসুরেরা তাহার বিশাল দেহ আর শিং নাড়া দেখিয়া আর গর্জন শুনিয়া, আর তাঁহাকে আটকাইতে সাহসই পাইল না। তিনি ছুটিতে ছুটিতে সেই পুকুরে গিয়া চোঁ চোঁ শব্দে তাহার সমস্ত জল খাইয়া ফেলিলেন।

 ইহার পর আর অসুরেরা ভূতদের সঙ্গে কিছুতেই পারিয়া উঠিল না; তাহারা ঢিপ্‌ ঢাপ্‌ ভূতের কিল খাইতে খাইতে ছুটিয়া দুর্গের ভিতরে ঢুকিয়া গেল। তাহা দেখিয়া সকলে হাততালি দিয়া হাসিতে লাগিল।”

 তখন আর অসুরেরা ভূতের ভয়ে স্থির থাকিতে না পারিয়া তাহাদের দুর্গসুদ্ধ সমুদ্রের উপরে চলিয়া গেল। কিন্তু দেবতারা তাহাদিগকে এত সহজে ছড়িবেন কেন? তাঁহারা সেইখানে গিয়া আবার তাহাদের সঙ্গে বিষম যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। দেখিতে দেখিতে তারকাসুর নন্দীর হাতে মারা গেল, বিদ্যুন্মালীরও সেই দশা হইতে আর অধিক বিলম্ব হইল না।

 তারপর ক্রমে সেই সময় আসিয়া উপস্থিত হইল, যখন চন্দ্র আর সূর্য একসঙ্গে পুষ্যা নক্ষত্রে আসিবেন। সেই পুণ্যযোগে ত্রিপুর দুর্গের তিনটি ভাগও এক জায়গায় আসিয়া মিলিবার কথা। তখন তাহার উপরে শিবের বাণ পড়িলে, এক বাণেই সেই দুর্গ নষ্ট হইয়া যাইবে। শিব তাহার জন্যই ধনুর্বাণ লইয়া প্রস্তুত আছে। ঠিক সময়টি উপস্থিত হইবামাত্র ভীষণ শব্দে তিনি সেই বাণ ছড়িয়া দিলেন, অমনি তাহা আকাশ পাতাল আলো করিয়া অসুরদিগের দুর্গের উপর গিয়া পড়িল। সে বাণের তেজ এমনি ছিল যে দুর্গের উপরে তাহা পড়িবামাত্রই দেখিতে দেখিতে সেই দুর্গ পুড়িয়া ছাই হইয়া গেল।

 এইরূপে ত্রিপুর দুর্গের শেষ হইল। অসুরেরা আর সকলেই তাহার সঙ্গে পুড়িয়া মরিয়াছিল, কেবল ময় মরে নাই। সে শিবের ভক্ত ছিল, তাই শিব দয়া করিয়া নন্দীকে পাঠাইয়া আগেই তাহাকে সাবধান করিয়া দেন।নন্দীর কথায় সে তাহার থাকিবার ঘরখানি সুদ্ধ পলাইয়া প্রাণ বাঁচাইয়াছিল।


মহিষাসুর

 একটা ভারি ভয়ংকর অসুর ছিল। সে মহিষ সাজিয়া বেড়াইত, তাই সকলে তাকে বলিত মহিষাসুর।

 দেবতারা কিছুতেই মহিষাসুরকে আঁটিতে পারিতেন না। একশত বৎসর ধরিয়া তাঁহারা তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিলেন, তাহাতে সে তাঁহাদিগকে হারাইয়া স্বর্গ হইতে তাড়াইয়া দিয়া