পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৬৩

যাইতেই কোথা হইতে এক হাতি আসিয়া দেবীর সিংহকে শুঁড় দিয়া জড়াইয়া বসিয়াছে। দেবী খড়্গ দিয়া হাতির শুঁড় কাটিলেন, অমনি হাতি আবার মহিষ হইয়া গেল, সেটা আবার শিং দিয়া দেবীকে পর্বত ছুঁড়িয়া মারে। দেবী এক লাফে সেই মহিষের ঘাড়ে চড়িয়া তাহাকে এমনি শূলের ঘা মারিলেন যে তখন অসুর মহাশয়কে সেই মহিষের ভিতর হইতে বাহির হইতেই হইল। কিন্তু তখনো তাহার তেজ কমে নাই, সে আধাআধি বাহির হইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছে!

 যাহা হউক, যুদ্ধ আর তাহার বেশিক্ষণ করিতে হইল না। কেননা, দেবী সেই মুহূর্তেই খড়্গ দিয়া তাহার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন।

 তখন তো দেবতাগণের খুব আনন্দ হইবেই। তাঁহারা দেবীকে প্রণাম করিয়া তাঁহার অনেক স্তবস্তুতি করিলেন।

 দেবী তাহাতে তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “তোমরা কি বর চাও?”

 দেবগণ বলিলেন, “আবার কি বর চাহিব? মহিষাসুর মরিয়াছে। তাহাতেই আমাদের ঢের ইয়াছে। এখন শুধু এইটুকু বল যে আমাদের আবার যদি বিপদ হয় তখন ডাকিলে আসিবে।”

 দেবী বলিলেন, “আচ্ছা, আমি আসিব।”

 এই বলিয়া তিনি আকাশে মিলাইয়া গেলেন।

 অসুর যতদিন আছে, ততদিন দেবতাদিগের বিপদ হওয়ার আর ভাবনা কি?

 কাজেই বুঝিতেই পার যে দেবীকে শীঘ্রই আবার তাঁহাদের ডাকে আসিতে হইয়াছিল।


শুম্ভ-নিশুম্ভ

 শুম্ভ, আর তাহার ভাই নিশুম্ভ, এই দুটা অসুর দেবতাদিগকে বড়ই নাকাল করিয়াছিল। তাহারা তাঁহাদিগকে স্বর্গ হইতে তাড়াইয়া দিয়া আর অস্ত্র-শস্ত্র কাড়িয়া লইয়াই সন্তুষ্ট থাকে নাই, তাঁহাদের ব্যবসায় পর্যন্ত নিজেরা করিতে আরম্ভ করিল। চন্দ্র, সূর্য, কুবের, পবন, অগ্নি কাহারও ব্যবসাই তাঁহাদের হাতে রাখিল না।

 বিপাকে পড়িয়া দেবতারা বলিলেন, “আর কাহার কাছে যাইব। মহিষাসুরের হাত হইতে যে দেবী আমাদিগকে বাঁচাইয়াছিলেন; সেই চণ্ডিকা দেবীকেই ডাকি।” এই বলিয়া তাঁহারা হিমালয় পর্বতে গিয়া চণ্ডিকা দেবীর স্তব করিতে লাগিলেন। সেই সময় পার্বতী সেই পথে যাইতেছিলেন, তিনি দেবতাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনারা কাহার স্তব করিতেছেন?” তাহার কথা শেষ হইতে না হইতেই তাঁহার শরীর হইতে চণ্ডিকা দেবী বাহির হইয়া বলিলেন, “দেবতারা আমাকেই ডাকিতেছেন, শুম্ভ-নিশুম্ভ তাঁহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছে।” এই বলিয়া চণ্ডিকা দেবী যারপরনাই সুন্দর একটি মেয়ে সাজিয়া হিমালয় পর্বতে বসিয়া রহিলেন।

 চণ্ড আর মুণ্ড নামে দুটা অসুর সেইখানে কি করিতে আসিয়াছিল, তাহারা সেই মেয়েটিকে দেখিতে পাইয়া শুম্ভকে গিয়া বলিল যে, “মহারাজ, হিমালয় পর্বতে কি আশ্চর্য সুন্দরী একটি মেয়েকে দেখিয়া আসিয়াছি কি বলিব। এমন আর কেহ কখনো দেখে নাই। মহারাজ, সংসারে যত ভালো ভালো জিনিস, সব আপনারা আনিয়াছেন, কিন্তু এই মেয়েটিকে রানী