পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিতে না পারিলে সবই মাটি।”

 এ কথা শুনিয়া শুম্ভ তখনই সুগ্রীব নামে একটা অসুরকে ডাকিয়া বলিল, “সুগ্রীব, শীঘ্র যাও। যেমন করিয়া পার সেই মেয়েটিকে খুশি করিয়া এখানে লইয়া আইস।”

 সুগ্রীব হিমালয়ে গিয়া দেবীকে বিশেষ করিয়া বুঝাইতে লাগিল, “আমার প্রভু যে শুম্ভ আর নিশুম্ভ, তাহাদের মতন আর জগৎ-সংসারে কেহই নাই। হে দেবি, ইঁহাদের একজনকে বিবাহ করিলে তোমার আর সুখের সীমা থাকিবে না।”

 দেবী বলিলেন, “আহা। তুমি বড় ভালো কথা বলিয়াছ, তোমার যে প্রভু, তাঁহাদের মতন আর কোথাও কেহ নাই। কিন্তু আমার ছেলেমানুষী খেয়াল হইয়াছে, আমাকে যুদ্ধে হারাইতে না পারিলে কেহ আমাকে বিবাহ করিতে পারিবে না। তোমার প্রভুকে গিয়া বল শীঘ্র আসিয়া আমাকে যুদ্ধে হারাইয়া বিবাহ করুন।”

 এ কথা শুনিয়া শুম্ভ কি ভয়ানক চটিল, বুঝিতে পার। সে অমনি তাহার সেনাপতি ধুম্রলোচনকে বলিল, “যাও তো ধূম্রলোচন, সেই ঠেঁটা মেয়েটাকে চুলে ধরিয়া নিয়া আইস।” ধূম্রলোচন অনেক লোক লইয়া ভারি ঘটা করিয়া দেবীকে আনিতে গেল। কিন্তু সে তাঁহাকে ধরিয়া আনিবে কি, তিনি কেবল একটিবার ‘হুঁ’ করিয়া তাহার দিকে চাহিবামাত্রই পুড়িয়া ছাই, তাহার সঙ্গে আর যত অসুর আসিয়াছিল, দেবীর সিংহই তাহাদিগকে শেষ করিয়া দিল।

 তখন শুম্ভ আরো অনেক সৈন্য, রথ, হাতি, ঘোড়া সঙ্গে দিয়া সেই চণ্ড আর মুণ্ডকে পাঠাইল। তাহারা খাঁড়া ঢাল হাতে হিমালয়ে গিয়া বিষম কাঁইমাই শব্দে যেই দেবীকে ধরিতে যাইবে অমনি দেবী ভ্রূকুটি করিয়া তাহাদের দিকে তাকাইলেন। ভ্রূকুটি করিবামাত্র তাঁহার কপাল হইতে আর একটি দেবতা বাহির হইয়া আসিলেন, তাঁহার নাম চামুণ্ডা। তাঁহার চেহারা বড়ই ভয়ংকর। রঙ কালো, চোখ লাল, শরীরে মাংস নাই, খালি হাড় আর চামড়া। হা ঁকরিলে পাহাড় পর্বত গিলিয়া ফেলিতে পারেন, চ্যাঁচাইলে দেব দানব সকলের মাথা ঘুরিয়া যায়। চামুণ্ডা বাঘের ছাল পরিয়া, মানুষের মাথার মালা গলায় দিয়া গদা খড়্গ পাশ হাতে আসিয়াই অসুরদিগকে ধরিয়া মুড়ি-মুড়কির মতো মুখে পুরিতে লাগিলেন। হাতি, রথ, ঘোড়া, মাহুত, সারথি, অঙ্কুশ, জাঠা, গদা, যাহা হাতে উঠে, মনের সুখে চিবাইয়া খান, বাছিবার দরকার হয় না। অসুরদের যত অস্ত্র আসে, সব গিলিয়া ফেলেন, আর হি, হি, হি, হি করিয়া হাসেন। দেখিতে দেখিতে চামুণ্ডা সকল অসুর খাইয়া শেষ করিলেন। বাকি রহিল কেবল চণ্ড আর মুণ্ড! তাহাদের চুলে ধরিয়া মাথা কাটিতেও মুহূর্তেক মাত্র লাগিল।

 ইহার পর শুম্ভ আর নিশুম্ভ নিজেই যুদ্ধ করিতে আসিল। তাহাদের সঙ্গে অতি ভয়ংকর ভয়ংকর অসুর যে কত আসিল, আর হাতি, ঘোড়া, রথ, অস্ত্র যে কতরকম আসিল, তাহার সীমা সংখ্যা নাই। আর যুদ্ধ যাহা হইল, তাহার কথা কি বলিব! দেবীর সঙ্গে চামুণ্ডা আছেন, আর অন্য দেবতারাও নানারকমে তাহাকে সাহায্য করিতেছেন, আর দেবীর সিংহ তো আছেই। সে সময়ে দেবী এমন বিকট হাসি হাসিতেছিলেন, যে অনেক অসুর তাহাতেই মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যাইতেছিল, আর তখন চামুণ্ডার মতন দেবী নিজেও তাহাদিগকে ধরিয়া মুখে দিতেছিলেন। ইহার পর আর টিকিতে না পারিয়া অসুরেরা ছুটিয়া পলাইতে লাগিল।

 অসুরদের মধ্যে একজন ছিল, তাহার নাম রক্তবীজ সে বেটা বড়ই ভয়ংকর;তাহার এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পড়িলেই সেখান হইতে একটা বিশাল অসুর দাঁত খিচাইয়া উঠিয়া