দাঁড়ায়। সেই রক্তবীজকে লইয়া দেবী প্রথমে একটু মুস্কিলে পড়িলেন। তাহাকে যত কাটেন, ততই রক্ত পড়ে, আর ততই হাজার হাজার অসুর উঠিয়া দাঁড়ায়। অসুরে ত্রিভুবন ছাইয়া গেল, তাহাদের চীৎকারে পাতালের লোক অবধি কালা হইয়া গেল। দেবতারা তো ভাবিলেন, সর্বনাশ বুঝি হয়।
তখন দেবী চামুণ্ডাকে বলিলেন, “এক কাজ কর। অসুরের গায়ে খোঁচা লাগিতে না লাগিতেই তাহার রক্ত চাটিয়া খাইবে। আর সেই রক্ত হইতে অসুর হইতে না হইতেই তাহাকে গিলিয়া ফেলিবে।” চামুণ্ডা বলিলেন, “আচ্ছা”, ইহার পর আর রক্তবীজের বেশি বাড়াবাড়ি করিতে হয় নাই। গিলিয়া খাইলে আর অসুর হইয়াই কি করিবে? কাজেই দেখিতে দেখিতে অসুরের দল কমিয়া গেল, রক্তবীজের গায়ের রক্তও ফুরাইয়া আসিল। এতক্ষণ সে ভয়ানক যুদ্ধ করিতেছিল, কিন্তু রক্ত ফুরাইয়া গেলে আর তাহার কিছু করবার শক্তি রহিল না। দেখিতে দেখিতে দেবী নানা অস্ত্রে তাহাকে মারিয়া ফেলিলেন।
তখন বাকি রহিল কেবল শুম্ভ আর নিশুম্ভ। নিশুম্ভ খানিকক্ষণ খুব যুদ্ধ করিয়া অজ্ঞান হইয়া গেল। তারপর শুম্ভ একাই যুদ্ধ করিতে লাগিল। শুম্ভের আটটা হাত ছিল, গায়ে জোরও ছিল তেমনি; সে যুদ্ধও করিল খুব। কিন্তু শেষে সেও অজ্ঞান হইয়া গেল।
ততক্ষণে নিশুম্ভের আবার জ্ঞান হইয়াছে। নিশুম্ভের দশ হাজার হাত। সেই দশ হাজার হাতে দশ হাজার অস্ত্র লইয়া সে দেবীর সঙ্গে বিষম যুদ্ধ করিতে লাগিল। মরিবার সময়ও সে সহজে মরিল না। দেবী শূল দিয়া তাহার বুক ভেদ করিয়া ফেলিলেন, সেই বুকের ভিতর হইতে আবার ‘দাঁড়া, দাঁড়া,’ বলিয়া একটা বিকট অসুর বাহির হইয়া আসিল। যাহা হউক, সে ভালো করিয়া বাহির হইতে না হইতেই দেবী হাসিতে হাসিতে তাহার মাথা কাটিয়া ফেলাতে, বেচারা যুদ্ধ করিবার অবসর পায় নাই।
শুম্ভ ইহার মধ্যেই আবার উঠিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছে। ইহাই তাহার শেষ যুদ্ধ। সে অনেকক্ষণ ধরিয়া বিধিমতে দেবীকে মারিবার চেষ্টা করিল। একটি একটি করিয়া তাহার সকল অস্ত্রই দেবী কাটিয়া ফেলিলেন তারপর বাকি রহিল খালি কিল আর চাপড়। একবার দেবীর চাপড় খাইয়া সে চিৎ হইয়া পড়িয়া গিয়াছিল। কিন্তু তখনই আবার উঠিয়া দেবীকে ধরিয়া এক লাফে আকাশে উঠিয়া গেল। তারপর আকাশে থাকিয়াই দুজনের কম যুদ্ধ হইল না। যুদ্ধ করিতে করিতে দেবী তাহাকে বনবন করিয়া ঘুরাইয়া মাটিতে আছড়াইয়া ফেলিলেন; তাহাতেও কি সে মরে? সে তখনই উঠিয়া কিল বাগাইয়া দেবীকে মারিতে চলিয়াছে। তখন দেবী তাঁহার শূল দিয়া তাহার বুকে এমনি ঘা মারিলেন যে তাহার পর তাহাকে উঠিতে হইল না।
তখন যে দেবতারা দেবীর স্তব খুব ভালো করিয়াই করিয়াছিলেন, তাহা আমি না বলিলেও তোমরা বুঝিয়া লইতে পারিবে। দেবী তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “তোমরা কি চাও?” দেবতারা বলিলেন, “এমনি করিয়া আমাদের শত্রুদিগকে বধ করিও।”
উপেন্দ্র—৮৪