এ কথা শুনিয়া শিব সকলকে বলিলেন, “শীঘ্র তাই কর, নহিলে আর রক্ষা নাই।” অমনি সকলে গণেশকে বাঁচাইবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। কিন্তু ইহার মধ্যে ভারি মুশকিল উপস্থিত— গণেশের মাথাটি কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। তাহাতে শিব বলিলেন, “তোমরা গণেশের শরীর ধুইয়া তাহার পূজা কর, আর কয়েকজন ছুটিয়া উত্তর দিকে যাও। সে দিকে গিয়া প্রথমে যাহাকে দেখিতে পাইবে, তাহারই মাথাটা কাটিয়া আনিয়া গণেশের দেহের সঙ্গে জুড়িয়া দাও।”
তৎক্ষণাৎ উরদিকে সকলে ছুটিল, আর খানিক দূর গিয়াই একটা এক দাঁতওয়ালা সাদা হাতি দেখিতে পাইল। হাতি হউক, আর যাহাই হউক, উহারই মাথা কাটিয়া নিয়া গণেশের দেহে জুড়িতে হইবে, কাজেই আর কি করা যায়? সেই হাতির মাথা আনিয়া গণেশের দেহে জুড়িয়া মন্ত্র পড়িতেই গণেশ উঠিয়া বসিলেন। তখন পার্বতীরও রাগ দুর হইল দেবতাদেরও বিপদ কাটিল। সেই অবধি গণেশেব হাতির মাথা, আর সেই অবধিই সকল দেবতার আগে গণেশের পূজা হয়।
গণেশ কেমন যুদ্ধ করিয়াছিলেন তাহা বলিয়াছি, গণেশের বিবাহ কেমন করিয়া হইয়াছিল আজ তাহা বলিব।
যুদ্ধের পর হইতে শিব গণেশকে যারপরনাই স্নেহ করেন, আর পার্বতীর তো কথাই নাই। কার্তিক যেমন শিব আর পার্বতীর পুত্র, গণেশ তাঁহাদের তেমনি পুত্র হইলেন, আর তাহাদের নিকট তেমন স্নেহ পাইতে লাগিলেন।
কার্তিক আর গণেশ যখন বড় হইলেন, তখন একটা কথা লইয়া দুজনের মধ্যে বড়ই তর্ক উপস্থিত হইল;কার্তিক বলেন, “আমি আগে বিবাহ করিব,” গণেশ বলেন, “না আমি আগে বিবাহ করিব!”
তাঁহাদের এইরূপ তর্ক শুনিয়া শিব আর পার্বতী বড়ই ভাবনায় পড়লেন। দুই পুত্রকেই তাঁহারা সমান স্নেহ করেন; ইহাদের কাহাকে চটাইয়া কাহার বিবাহ আগে দেন? শেষে অনেক ভাবিয়া শিব স্থির করিলেন, “তোমাদের মধ্যে যে আগে এই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করিয়া (অর্থাৎ তাহার চারিদিকে ঘুরিয়া) আসিতে পারিবে, তাহার বিবাহই আগে দিব।”
এ কথা শুনিয়া কার্তিক তখনই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করিতে বাহির হইলেন। গণেশের এই বড় ভুঁড়ি, তাহা লইয়া ছুটাছুটি করিবার সুবিধা নাই;তিনি ভাবিলেন, ‘তাইতো, এখন করি কি? ক্রোশখানেক যাইতে না যাইতেই আমার হাঁপ ধরে, পৃথিবীর চারিদিক আমি কি করিয়া ঘুরিব?’
যাহাই হউক, গণেশ বড়ই বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি মনে মনে এক চমৎকার যুক্তি স্থির করিয়া, স্নানের পর দুখানি আসন হাতে পিতামাতার নিকট আসিয়া বলিলেন, “বাবা! মা! এই দুইখানি আসনে আপনারা দুজনে বসুন, আমি আপনাদের পূজা করিব।”
এই কথায় শিব আর পাবর্তী সন্তুষ্ট হইয়া দুই আসনে দুইজন বসিলেন। গণেশও ভক্তির