অগস্ত্য মুনি সাগরের জল খাইয়া ফেলিয়াছিলেন, এ কথা তোমরা শুনিয়াছ। সেই সাগর অনেকদিন শুকনোই পড়িয়াছিল;তারপর যে কেমন করিয়া তাহাতে জল আসিল, সে অতি আশ্চর্য ব্যাপার।
অযোধ্যায় এক রাজা ছিলেন; তাহার নাম ছিল সগর। রাজার বড় রানীর একটি ছেলে ছিল, তাহার নাম অসমঞ্জ। তাঁহার ছোট রানীর ষাট হাজার ছেলে ছিল, তাহাদের নাম জানি না।
অসমঞ্জ এমনি দুষ্ট ছিল যে ছোট ছোট ছেলেদিগকে ধরিয়া সে জলে ফেলিয়া দিত আর তাহারা খাবি খাইয়া মরিবার সময় হাসিত। কাজেই রাজা বিরক্ত হইয়া তাহাকে তাড়াইয়া দিলেন। যা হোক, অসমঞ্জের পুত্র অংশুমান বড় ভালো ছেলে ছিল; রাজা যত্নের সহিত তাহাকে মানুষ করিলেন।
ইহার অনেক বৎসর পরে একবার রাজা খুব ধুমধামের সহিত অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করিলেন। ঘোড়ার কপালে জয়পত্র বাঁধিয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিতে হয়; সেই ঘোড়া সমস্ত পৃথিবী ঘুরিয়া, ফিরিয়া আসিলে তাহার মাংসে যজ্ঞ হয়, সেই যজ্ঞের নাম অশ্বমেধ। জয়পত্রের মানে এই যে, তাহাতে লেখা থাকে, “খবরদার! এ ঘোড়া কেহ আটকাইয়ো না!” সে কথা যে পড়ে, সেই চটে, আর গায়ে জোর থাকিলে তখনি ঘোড়া আটকায়। কাজেই ঘোড়াকে ছাড়াইয়া আনিবার জন্য তাহার সঙ্গে খুব মজবুত লোক দিতে হয়।
সগর অংশুমানকে সঙ্গে দিয়া তাঁহার জয়পত্র বাঁধা যজ্ঞের ঘোড়াটি ছাড়িয়া দিয়াছেন; সে ঘোড়া সেই জয়পত্রসুদ্ধ পড়বি তো পড় স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের সামনেই গিয়া পড়িয়াছে আর ইন্দ্রও অমনি এক রাক্ষসের বেশ ধরিয়া তাহাকে চুরি করিয়া বসিয়াছেন।
এখন উপায় কি হইবে? ঘোড়া না পাইলে তো যজ্ঞই মাটি, আর তাহা হইলে নিতান্তই বিপদের কথা। রাজার ষাট হাজার ছেলে তখনই ব্যস্ত হইয়া ঘোড়া খুঁজিতে ছুটিল। শহর বন্দর, পাহাড় পর্বত, বন মাঠ কিছুই তাহারা বাকি রাখিল না। তাহাতেও ঘোড়ার দেখা না পাইয়া ষাট হাজার ভাই ষাট হাজার খস্তা হাতে মাটি খুঁড়িতে আরম্ভ করিল। তাহাতেও ঘোড়া না পাইয়া রাজাকে আসিয়া বলিল, “বাবা, ঘোড়া তো পাওয়া গেল না, এখন কি করি?” রাজা বলিলেন, “আবার খুঁজিয়া দেখ; ঘোড়া না লইয়া ফিরিয়ো না!”
কাজেই বেচারারা আর কি করে, তাহারা আবার প্রাণপণে মাটি খুঁড়িতে লাগিল। খুঁড়িতে খুঁড়িতে পূর্বদিকে গিয়া তাহারা দেখিল যে পর্বতের মতো বিশাল হাতি পৃথিবীটাকে মাথায় করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। সেই হাতির নাম বিরূপাক্ষ; যখন ঘাড় নাড়ে, তখনই ভূমিকম্প হয়। যাহা হউক, বিরূপাক্ষের কাছে সেই ঘোড়া ছিল না, কাজেই রাজপুত্রেরা সেখান হইতে আবার দক্ষিণদিকে খুঁড়িয়া চলিল;খুঁড়িতে খুঁড়িতে দেখিল সেদিকেও মহাপক্ষ নামে তেমনি বিশাল এক হাতি পৃথিবীটাকে মাথায় বহিতেছে। এমনি করিয়া তাহারা পশ্চিমে সৌমনাং আর উত্তরে ভদ্র নামে আরো দুটা হাতি পাইল, কিন্তু ঘোড়াকে পাইল না। কেমন করিয়াউপেন্দ্র—৮৫