পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

যারপরনাই ব্যস্ত হইয়া, আর তাহার চেয়েও বেশি রাগিয়া সেই জল সমস্তই খাইয়া ফেলিলেন। খাইবার সময় সকলে অবাক হইয়া সেই আশ্চর্য ব্যাপারের তামাশা দেখিয়াছিল, মুনিকে বারণ করিতে সাহস পায় নাই। মুনি সকল জল খাইয়া ফেলিলে পর তাহারা তাঁহাকে অনেক মিনতি করিয়া বলিল, “ঠাকুর! দয়া করিয়া গঙ্গাকে গড়িয়া দিন; ও যে আপনার মেয়ে!”

 এ কথায় মুনি অতিশয় তুষ্ট হইয়া কানের ভিতর দিয়া আবার গঙ্গাকে বাহির করিয়া দিলেন। সেই হইতে গঙ্গার নাম হইয়াছে “জাহ্নবী”, অর্থাৎ জহ্নুর মেয়ে।

 ইহার পরে আর গঙ্গার কোনো বিপদ ঘটে নাই। তিনি ভগীরথের পিছু পিছু পাতালে গিয়া সগরের সেই ষাট হাজার পুত্রের ছাই ভিজাইয়া দিলেন, আর অমনি তাঁহারা সকলে দেবতার ন্যায় সুন্দর রূপ ধরিয়া স্বর্গে চলিয়া গেল।

 সেই যে অগস্ত্য মুনি সাগরের জল খাইয়া ফেলিয়াছিলেন, তাহার পর হইতে এতদিন সেই সাগর শুকনো পড়িয়াছিল। এতদিন পরে গঙ্গার জল আসিয়া আবার তাহাকে ভরিয়া দিল।

 তখন ব্রহ্মা ভগীরথকে বলিলেন, “যতদিন পর্যন্ত এই সাগরে জল থাকিবে, ততদিন সগরের পুত্রেরা স্বর্গে বাস করিবে। আর এখন হইতে গঙ্গা তোমার কন্যার মতো হইলেন, সুতরাং লোকে তাহাকে ‘ভাগীরথী’ বলিয়া ডাকিবে।”


হনুমানের বাল্যকাল

 হনুমানের মায়ের নাম ছিল অঞ্জনা। বানরের স্বভাব যেমন হইয়া থাকে, অঞ্জনার স্বভাবও ছিল অবশ্য তেমনিই। হনুমান কচি খোকা, তাহাকে ফেলিয়া অঞ্জনা বনের ভিতরে গেল, ফল খাইতে। বনে গিয়া সে মনের সুখে গাছে গাছে ফল খাইয়া বেড়াইতে লাগিল, এদিকে খোকা বেচারা যে ক্ষুধায় চ্যাঁচাইতেছে, সে কথা তাহার মনেই হইল না।

 হনুমান বেচারা তখন আর কি করে? চ্যাঁচাইয়া সারা হইল, তবু মার দেখা নাই, কাজেই তাহার নিজেকেই কিছু খাবারের চেষ্টা দেখিতে হইল। সেটা ছিল ভোৱের বেলা, টুকটুকে লাল সূর্যটি তখন সবে বনের আড়াল হইতে উঁকি মারিতেছে সেই টুকটুকে সূর্য দেখিয়াই হনুমান ভাবিল ওটা একটা ফল। অমনি আর কথাবার্তা নাই, সে একলাফে আকাশে উঠিয়া ভয়ানক সোঁ সোঁ শব্দে সেই ফল পাড়িয়া খাইতে ছুটিল।

 তোমরা আশ্চর্য হইও না। মুমান তখন কচি খোকা বটে, কিন্তু সে যে-সে খোকা ছিল না, সে কথা আমরা সহজেই বুঝিতে পারি। সেই শিশুকালেই তাহার বিশাল দেহ ছিল, আর গায়ের রঙটি ছিল সেই ভোরবেলার সূর্যের মতোই ঝক্‌ঝকে লাল। দেব দানব যক্ষ সকলেই তাহার কাণ্ড দেখিয়া অবাক হইয়া গেল। অবাক না হইবেই বা কেন? সেই খোকা এমন ভয়ংকর ছুটিয়া চলিয়াছে যে, তেমন গরুড়েও পারে না, ঝড়েও পারে না। সকলে বলিল, “শিশুকালেই এমন, বড় হইলে না জানি এ কেমন হইবে।”

 এদিকে হনুমান গিয়া তো সূর্যের কাছে পৌছিয়াছে, কিন্তু ইহার মধ্যে আর এক ব্যাপার উপস্থিত। সেইদিন ছিল গ্রহণের দিন, রাহু বেচারা অনেক দিনের উপবাসের পর সেইদিন