পড়িল, কিন্তু তাঁহাদের মুখের দিকে চাহিয়া ক্রমাগত চোখের জল ফেলা ভিন্ন আর একটিও কথা কহিতে পারিল না।
দধীচি ও প্রাতিথেয়ী তাহাকে অনেক আদর, অনেক আশীর্বাদ করিয়া, তাহার মনের সকল দুঃখ দূর করিয়া, আবার স্বর্গে চলিয়া গেলেন।
এইভাবে সকল দিকেই সুখ হইল, এখন পিপ্পলাদের সেই ভয়ংকর ভূতটা থামিলেই আর কোনো কথা ছিল না।
দেবতারা বলিলেন, “পিপ্পলাদ, তোমার এটাকে থামাও।”
পিপ্পলাদ বলিল, “সে সাধ্য তো আমার নাই। আপনারা গিয়া উহাকে থামিতে বলুন; আমাকে দেখিলে আবার কি না জানি করিতে চাহিবে।”
সে কথায় দেবতারা সেই ভয়ংকর জিনিসটার কাছে গিয়া তাহাকে থামিতে বলিলেন।
সে তাহাতে খেঁকাইয়া বলিল, “তাহা হইবে না! সকলকে খাইব, তবে তো থামিব। তাহার আগে আমার এ আগুন কিছুতেই নিভিবার নয়। বাস্তবিক, ইহাকে থামাইতে দেবতাদের বড়ই বেগ পাইতে হইয়াছিল। সে অনেক কথা, এখন আমার তাহা বলিবার অবসর নাই।
এক রাজা ছিলেন, তাঁহার নাম ছিল রৈবত ককুদ্মী। পশ্চিম সমুদ্রের ধারে, কুশস্থলী নামক নগরে তিনি বাস করিতেন। রৈবতের একটি কন্যা ছিল, তাহার নাম রেবতী। রেবতীর গুণের কথা আর বলিয়া শেষ করা যায় না। মেয়েটি দেখিতে যেমন অপরূপ সুন্দরী, তেমনি সুশীলা আর মিষ্টভাষিণী, আর বুদ্ধিমতীও যতদুর হইতে হয়।
রেবতী যতই বাড়িয়া উঠিলেন, রাজার মনেও ততই ভাবনা হইল যে, ‘আহা! আমার এই স্নেহের মেয়েটিকে এখন কাহার হাতে সমর্পণ করি?’
সংসারের যত ভালো ভালো রাজপুত্র একে একে সকলের সংবাদ রাজা লইলেন, কিন্তু কাহাকেও তাঁহার পছন্দ হইলনা। মন্ত্রী, পুরোহিত, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলকেই বলিলেন, কেহই তেমন ভালো একটি পাত্রের সন্ধান করিয়া দিতে পারিল না।
শেষে আর কোনো উপায় না দেখিয়া তিনি ভাবিলেন, ‘ব্রহ্মার কাছে যাই, তিনি অবশ্যই আমার মনের মতন একটি ছেলের কথা বলিতে পারিবেন।’
এই ভাবিয়া রাজা কন্যাটিকে লইয়া ব্রহ্মার সভায় গিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন হাহা আর হুহু নামে দুইজন গন্ধর্ব সেইখানে বসিয়া ব্রহ্মাকে গান শুনাইতেছিলেন। হাহা আর হুহুর মতো ওস্তাদ আর এই ত্রিভুবনে কখনো দেখা যায় নাই, তাঁহাদের সেই বিচিত্র সংগীত শুনিতে যে কি মিষ্ট লাগিতেছিল, তাহা কি বলিব! সে গান একবার শুনিতে আরম্ভ করিলে আর সকল বিষয়ের কথা ভুলিয়া যাইতে হয়। যতক্ষণ সে গানের শেষ না হয় ততক্ষণ আর উঠিয়া আসিবার জো থাকে না। সে আশ্চর্য গান একবার আরম্ভ হইলে আর শীঘ্র শেষও হইতে চাহে না। সেটা ছিল ত্রেতাযুগের আরম্ভ। গাহিতে গাহিতে সে যুগ শেষ হইয়া গেল, তারপর দ্বাপর আসিল, তাহাও প্রায় শেষ হইতে চলিল, তবে হাহা হুহু গান শেষ করিয়া