তা শুনে শিয়ালিনী বললে, ‘বুঝেছি। আচ্ছা, বেশ!’ বলেই সে খুব খুশি হয়ে গর্তের ভিতরে ঢুকল। তখন থেকে তারা সেই গর্তের ভিতরেই থাকে।
এমনি করে দিন কতক যায়, শেষে একদিন তারা দেখলে যে, ঐ বাঘ আসছে। অমনি শিয়ালিনী তার ছানাগুলোকে ধরে খুব চিমটি কাটতে লাগল। তখন ছানাগুলি যে চেঁচাল, তা কি বলব!
শিয়াল তখন খুব মোটা আর বিশ্রী গলার সুর করে জিগগেস করলে, ‘খোকারা কাঁদছে কেন?’
শিয়ালিনী তেমনি বিশ্রী সুরে বললে, ‘ওরা বাঘ খেতে চায়, তাই কাঁদছে।’
বাঘ তার গর্তের দিকে আসছিল। এর মধ্যে ‘ওরা বাঘ খেতে চায়’ শুনে সে থমকে দাঁড়াল। সে ভাবলে, ‘বাবা! আমার গর্তের ভিতর না জানি ওগুলো কি ঢুকে রয়েছে। নিশ্চয়ই ভয়ানক রাক্ষস হবে, নইলে কি ওদের খোকারা বাঘ খেতে চায়!’
তখুনি শিয়াল বললে, ‘আরে বাঘ কোথায় পাব? যা ছিল, সবই তো ধরে এনে ওদের খাইয়েছি!’
তাতে শিয়ালিনী বললে, ‘তা বললে কি হবে? যেমন করে পার একটা ধরে আনো, নইলে খোকারা থামছে না।’ বলে সে ছানাগুলোকে আরো বেশী করে চিমটি কাটতে লাগল।
তখন শিয়াল বললে, ‘আচ্ছা, রোস রোস। ঐ যে একটা বাঘ আসছে। আমার ঝপাংটা দাও, এখুনি ওকে ভতাং করছি।’
ঝপাং বলেও কিচ্ছু নেই, ভতাং বলেও কিচ্ছু নেই-সবই শিয়ালের চালাকি। বাঘের কিন্ত সেই ঝপাং ও ভাতাং শুনেই প্রান উড়ে গেল। সে ভাবলে, ‘মাগো, এই বেলা পালাই, নইলে না জানি কি দিয়ে কি করবে এসে! বলে সে আর সেখানে একটুও দাঁড়াল না। শিয়াল চেয়ে দেখল যে, লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে ঝোপ জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে ছুটে পালাচ্ছে! তখন শিয়াল আর শিয়ালিনী লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললে, যাক, ‘আপদ কেটে গেছে!’
বাঘ তখনো এমনি ছুটছে যে তেমন আর সে কখনো ছোটেনি।
একটা বানর গাছের উপর থেকে তাকে ছুটতে দেখে ভারি আশ্চর্য হয়ে ভাবলে, ‘তাই তো, বাঘ এমনি ছুটছে, এ তো সহজ কথা নয়! নিশ্চয় একটা ভয়ানক কিছু হয়েছে!’ এই ভেবে সে বাঘকে ডেকে জিগগেস করলে, ‘বাঘ ভাই, বাঘ ভাই, কি হয়েছে? তুমি যে অমন করে ছুটে পালাচ্ছ?’
বাঘ হাঁপাতে হাঁপাতে বললে, ‘সাধে কি পালাচ্ছি? নইলে এক্ষুনি আমাকে ধরে খেত!’
বানর বললে, ‘তোমাকে ধরে খায়, এমন কোনো জানোয়ারের কথা তো আমি জানিনে।