পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৯১

 বিশ্বকর্মা আসিলে মুনি বলিলেন, “ভাই! শীঘ্র এসব দুর করিয়া আমার সেই আশ্রম আবার আনিয়া দাও, নহিলে তো অসুরের হাতে আমার প্রাণ যায় দেখিতেছি!”

 বিশ্বকর্মা দেখিলেন মুনির বড়ই বিপদ, কাজেই তিনি তাঁর কথামতো কাজ করিতে আর বিলম্ব করিলেন না। দেখিতে দেখিতে সেই সোনার পুরীর জায়গায় আবার কুঁড়েঘর আর বন হইল। অসুরদেরও রাগ থামিল, মুনিরও বিপদ কাটিল বিশ্বকর্মাও হো হো শব্দে হাসিতে হাসিতে ঘরে চলিয়া গেলেন।


সাপ রাজপুত্র

 এক রাজা ছিলেন, তাঁহার নাম ছিল শূরসেন! রাজার পুত্র না থাকায় তাঁহার মনে বড়ই দুঃখ ছিল। সেই দুঃখ দূর করিবার জন্য তিনি অনেক দান ধ্যান, অনেক যাগযজ্ঞ করিলেন। তাহার ফলে শেষে তাঁহার একটি পুত্র হইল বটে, কিন্তু সে সাধারণ লোকের ছেলেপিলের মতন নহে। সে একটি ভীষণ সর্প! যদিও মানুষের মতো কথা কয়!

 রাজা মনের দুঃখে বলিলেন, “হায়, হায়! এই সর্প লইয়া আমি কি করিব? ইহার চেয়ে যে পুত্র না হওয়া আমার অনেক ভালো ছিল।” কিন্তু সাপ সে কথা ভাবিলই না, সে রাজাকে বলিল, “বাবা, আমার চূড়াকরণ, উপনয়ন করাইলে না? আমার হাতেখড়ি দিলে না? বেদ পড়াইলে না? তাহা হইলে যে আমি মূর্খ থাকিয়া যাইব।”

 রাজা আর কি করেন? তিনি ব্রাহ্মণ ডাকিয়া সব করাইলেন। সেই সাপ তখন দেখিতে দেখিতে সকল শাস্ত্র শেষ করিয়া মস্ত বড় পণ্ডিত হইয়া উঠিল। তারপর একদিন সে রাজাকে বলিল, “বাবা, আমার বিবাহ দিলে না? তাহা হইলে যে লোকে আমাকে ছেলেমানুষ ভাবিবে, আমার কথা গ্রাহ্য করিবে না। আর তোমারও বংশ লোপ হইয়া যাইবে, তাহার দরুন শেষে তোমাকে নরকে যাইতে হইবে।”

 রাজার মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। তিনি বলিলেন, “বাছা, তুমি যদি মানুষ হইতে তবে তো কোনো মুশকিল ছিল না, কিন্তু তুমি যে সাপ, তোমাকে দেখিলে পালোয়ানেরাও ছুটিয়া পলায়। তোমাকে কে তাহার মেয়ে দিতে চাহিবে বল?”

 সাপ বলিল, “নাই বা চাহিল। রাজাদের তো জোর করিয়া মেয়ে ধরিয়া আনিয়াও বিবাহ হইতে পারে, তাই কেন কর না? আমার যদি বিবাহ না হয়, তবে আমি নিশ্চয় গঙ্গায় ডুবিয়া মরিব।”

 এ কথায় রাজামহাশয় তো বড়ই সংকটে পড়িলেন।

 এখন উপায় কি? শেষে অনেক ভাবিয়া তিনি তাঁহার অমাত্যদিগকে বলিলেন, “আমার পুত্র এখন বড় হইয়াছে, আর খুব উপযুক্তও বটে! তোমরা তাহার বিবাহের চেষ্টা দেখ।”

 রাজার যে একটি ছেলে আছে অমাত্যরা সকলেই তাহা জানে, কিন্তু সেটি যে একটি সাপ, সে কথা তাহাদের কেহই জানে না। সে কথাটি রাজামহাশয় গোপন রাখিয়াছেন। কাজেই রাজার কথা শুনিয়া তাহারা খুব উৎসাহের সহিত বলিল, “মহারাজ! আপনার যখন ছেলে, তখন আর চেষ্টার বিশেষ দরকার কি? দেশ-বিদেশে আপনার নাম; আপনি যাহার