নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিল। তারপর সে যেই জানিল যে তিনি এই মণির জন্য আসিয়াছেন, অমনি মণি তো তাঁহাকে দিলই সঙ্গে সঙ্গে নিজের কন্যাটিও দান করিল।
কৃষ্ণ সেই মণি আর কন্যা লইয়া মনের সুখে দ্বারকায় চলিয়া আসিলেন। দ্বারকার লোকেরা তাঁহাকে দেখিয়া কি বলিল, তাহা আমি জানি না, তবে সত্রাজিৎ যে মণি পাইয়া খুবই খুশি হইয়াছিলেন, এ কথা নিশ্চয় বলিতে পারি।
সেই ভল্লুকটি যে সে ভল্লুক ছিল না। সে সেই জাম্ববান্, রামায়ণে যাহার কথা তোমরা পড়িয়া নিশ্চয়ই খুব সন্তুষ্ট হইয়াছ। আর তাহার মেয়েটির নাম ছিল জাম্ববতী। সেও কি ভল্লুক ছিল?
পূর্বকালে শত্রুজিৎ নামে অতি বিখ্যাত এক রাজা ছিলেন। তাঁহার পুত্রের নাম ঋতধ্বজ। ঋতধ্বজের গুণের কথা আর কি বলিব। যেমন রূপ, তেমনি বুদ্ধি, তেমনি বিনয়, তেমনি বল, তেমনি বিক্রম। এমন পুত্রলাভ করিয়া রাজা শত্রুজিৎ খুবই খুশি হইয়াছিলেন, তাহাতে আর সন্দেহ কি?
ইহার মধ্যে একদিন গালব নামে এক মুনি একটি সুন্দর ঘোড়া লইয়া রাজা শত্রুজিতের নিকট আসিয়া বলিলেন, “মহারাজ, আমি বিপদে পড়িয়া আপনার নিকট আসিয়াছি। একটা দুষ্ট দৈত্য আমাকে বড়ই ক্লেশ দিতেছে। সে কখনো সিংহ, কখনো বাঘ, কখনো হাতি, কখনো আর কোনো জন্তুর বেশে আসিয়া দিবারাত্র আমাকে অস্থির রাখে, উহার জ্বালায় আমার তপস্যাই অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছে। আমি ইচ্ছা করিলে শাপ দিয়া উহাকে বধ করিতে পারি, কিন্তু তাহাতে তপস্যার হানি হয়, কাজেই আর কি করিব, শুধু নীরবে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি। এমন সময় একদিন এই ঘোড়াটি আকাশ হইতে আমার নিকট পড়িল, আর দৈববাণী হইল, ‘গালব! এই ঘোড়াটির নাম কুবলয়। ইহার কিছুতেই ক্লান্তি নাই, সংসারে ইহার অগম্য স্থান নাই, ইহাকে রোধ করিবার শক্তি কাহারও নাই। রাজা শত্রুজিতের পুত্র ঋতধ্বজ ইহাতে চড়িয়া তোমার শত্রু সেই দুষ্ট দানবকে বধ করিয়া কুবলয়াশ্ব নামে বিখ্যাত হইবে।’
“মহারাজ তাই আমি এই ঘোড়াটি লইয়া আপনার নিকট আসিয়াছি। আপনার পুত্র যদি ইহাতে চড়িয়া দানবটাকে তাড়াইয়া দেন, তবেই এ ব্রাহ্মণের তপস্যা হয়।”
রাজার আজ্ঞায় তখনই ঋতধ্বজ সেই আশ্চর্য ঘোড়ায় চড়িয়া মুনির সঙ্গে তাহার আশ্রমে আসিলেন। তারপর মুনিরা সকলে তাঁহাদের সন্ধ্যাবন্দনা আরম্ভ করিতে না করিতেই সেই দুষ্ট দানব শূকর সাজিয়া আসিয়া উপস্থিত হইল। মুনির শিষ্যেরা তাহাকে দেখিয়া প্রাণপণে চ্যাঁচাইতে লাগিল। রাজপুত্র তখনই সেই ঘোড়ায় চড়িয়া তাহাকে তাড়া করিলেন। তাঁহার হাতের অর্ধচন্দ্র বাণের বিষম খোঁচা খাইয়া আর কি দুষ্ট দানব সেখানে দাঁড়ায়? সে প্রাণের মায়ায় কোন পথে পলায়ন করিবে কিছুই বুঝিতে পারিল না। পাহাড়ে, বনে, শূন্যে, সাগরে, যেখানে যায়, রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়িয়া, ধনুর্বাণ হাতে সেইখানেই গিয়া উপস্থিত হন। এইভাবে চারি হাজার ক্রোশ চলিয়া শেষে সে একটা গর্তের ভিতরে লাফাইয়া পড়িল। রাজপুত্রও