সেই সকল দেবতার শ্রেষ্ঠ দেবতাকে সম্মুখে দেখিয়া যারপরনাই আনন্দিত হইল, ভয়ও পাইল। সে অমনি তাঁহার পায়ে লুটাইয়া বলিল, “আমি তো জানি না, কি করিয়া আপনার স্তব করিতে হয়; আমাকে তাহা শিখাইয়া দিন।” বলিতে বলিতে শ্রীহরির কৃপায় তাহার জ্ঞান হইল। তখন সে প্রাণ ভরিয়া অতি মধুর বাক্যে শ্রীহরির স্তব করিতে করিতে বলিল, “বিমাতা আমাকে ধমকাইয়া বলিয়াছেন, যে তাঁহার পুত্র নহি বলিয়া আমি রাজাসনে বসিতে পাইব না। হে প্রভু, আমি আপনার নিকট এমন স্থান চাই যে তাহা সংসারের সকল স্থানের চেয়ে ভালো।” শ্রীহরি বলিলেন, “ধ্রুব, তুমি তাহাই পাইবে। চন্দ্র, সূর্য, বুধ, বৃহস্পতি সকলের উপরে তোমার স্থান হইল। তোমার মাতাও তারা হইয়া তোমার নিকটে থাকিবেন।”
সেই অবধি শ্রীহরির বরে ধ্রুব আকাশে ধ্রুবতারা হইয়া সংসারচক্র ঘুরাইতেছে এইরূপ আমাদের পুরাণে লেখা।
বিষ্ণুর অবতার
পুরাণে আছে যে, বিষ্ণু সময় সময় নানারূপ জন্তু ও মানুষের রূপ ধরিয়া অনেক আশ্চর্য কাজ করিয়াছিলেন। বিষ্ণুর এইসকল রূপ ধারণকে তাহার এক একটি ‘অবতার’ বলা হয়।
এই যে সৃষ্টি তাহার জীবন নাকি এক কল্প কাল। এক এক কল্প পরে ‘প্রলয়’ অর্থাৎ সৃষ্টিনাশ হইয়া আবার নাকি নূতন সৃষ্টি হয়। এখনকার এই জগতের সৃষ্টি হইবার পূর্বে আর এক জগতের প্রলয় হইয়াছিল। বিষ্ণু তাহার পূর্বেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে প্রলয়ের কাল উপস্থিত হইয়াছে। তখন তিনি একটি খুব ছোট মাছের রূপ ধরিয়া কৃতমালা নামক নদীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেই সময়ে সূর্যের পুত্র বৈবস্বত মনু সেই নদীর নিকটে থাকিয়া তপস্যা করিতেছিলেন। একদিন মনু কৃতমালার জলে নামিয়া তর্পণ করিতেছেন, এমন সময় হঠাৎ তিনি দেখিলেন যে একটি নিতান্ত ছোট মাছ তর্পণের জলের সঙ্গে তাঁহার অঞ্জলির ভিতর উঠিয়াছে।
সেই মাছটিই ছিলেন বিষ্ণু, কিন্তু মনু তাহা জানিতেন না। তিনি মাছটিকে জলে ফেলিয়া দিতে যাইবেন, এমন সময় সে তাঁহাকে মিনতি করিয়া বলিল, “আমাকে জলে ফেলিবেন না। বড় মাছেরা আমাকে খাইয়া ফেলিবে।” এ কথায় মনু তাহাকে তাঁহার ঘরে আনিয়া কলসীর ভিতরে রাখিয়া দিলেন। কিন্তু সে মাছ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে লাগিল যে দেখিতে দেখিতে আর সে সেই কলসীতে ধরে না। কলসী হইতে চৌবাচ্চায় রাখিলেন, খানিক পরেই আর সে তাহাতেও ধরে না; চৌবাচ্চা হইতে পুকুরে রাখিলেন, শেষে তাহাতেও ধরে না, সেখান হইতে হ্রদে রাখিলেন, ক্রমে তাহাও তাহার পক্ষে ছোট হইয়া গেল।
তখন মনু তাঁহাকে কাঁধে করিয়া সমুদ্রের জলে ফেলিবামাত্র সে লক্ষ যোজন বড় হইয়া যাওয়ায়, তিনি যারপরনাই আশ্চর্যাম্বিত হইয়া বলিলেন, “ভগবন্, আপনি কে? আপনি নিশ্চয় স্বয়ং বিষ্ণু! আপনাকে নমস্কার।” মাছ বলিল, “তুমি ঠিক বুঝিয়াছ আমি দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের নিমিত্ত মৎস্যরূপ ধারণ করিয়াছি। আজ হইতে সাতদিনের মধ্যে সকল সৃষ্টি সাগরের জলে ডুবিয়া যাইবে। সেই সময়ে তোমার নিকট একখানি নৌকা