সে কালে ক্ষত্রিয়েরা বড়ই উদ্ধত হইয়া উঠিয়াছিল। তাহাদিগকে সাজা দিবার জন্যই পরশুরামের জন্ম।
তখনকার প্রধান ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন কার্তবীর্য, অর্থাৎ কৃতবীর্যের পুত্র, অর্জুন। দত্তাত্রেয়ের বরে অর্জুনের এক হাজার হাত হইয়াছিল। সেই এক হাজার হাতে এক হাজার অস্ত্র লইয়া তিনি দেবতাদিগকে অবধি যুদ্ধে হারাইয়া দিতেন, এজন্য তাঁহার দর্পের আর সীমাই ছিল না।
একবার কার্তবীর্য মৃগয়া করিতে গিয়া বনের ভিতর অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়েন। সেই সময়ে মহর্ষি জমদগ্নি তাঁহাকে নিমন্ত্রণপূর্বক, নিজের আশ্রমে আনিয়া বিবিধ উপচারে আহার করাইয়াছিলেন। ভালো লোক হইলে ইহাতে সে মুনির প্রতি কতই কৃতজ্ঞ হইত। আর হয়তো তাঁহার কত উপকার হইত। কিন্তু কার্তবীর্য সেরূপ স্বভাবের লোক ছিলেন না। মুনি যে তাঁহাকে কত ক্লেশ হইতে বাঁচাইলেন, সে কথা তাঁহার মনেই আসে না। তিনি একদৃষ্টে কেবল মুনির গাইটিকেই দেখিতে লাগিলেন। সেটি কামধনু, মুনি তাহার নিকট যাহা চাহেন, তাহাই পান, রাজার লোক তাহা খাইয়া শেষ করিতে পারে না। রাজা ভাবিলেন, এ গাইটি তাঁহার না হইলেই চলিতেছে না। কাজেই তিনি মুনিকে বলিলেন, “ভগবন্, গাইটি আমাকে দিন।” মুনি সে কথায় রাজি না হওয়ায় রাজা সেটি তাঁহার নিকট হইতে কড়িয়া লইয়া গেলেন।
পরশুরাম কার্তবীর্যকে বধ করিয়া সেই গাই ফিরাইয়া আনিলেন। তারপর তিনি বনে চলিয়া গিয়াছেন এমন সময় কার্তবীর্যের পুত্রেরা আসিয়া অতি নিষ্ঠুরভাবে মহর্ষি জমদগ্নির প্রাণনাশ করিল।
পরশুরাম আশ্রমে ফিরিয়া সেই দারুণ সংবাদ শুনিবামাত্র ক্রোধে অধীর হইয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন যে পৃথিবীর যত ক্ষত্রিয় সব তিনি মারিয়া শেষ করবেন। তারপর ভীষণ কুঠার হস্তে সেই যে তিনি ক্ষত্রিয় মারিতে আরম্ভ করিলেন, তাহাদিগকে শেষ না করিয়া আর ক্ষান্ত হইলেন না। একবার নয়, দুবার নয়, ক্রমাগত একুশবার তিনি এইরূপে পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করেন। ক্ষত্রিয়ের রক্তে কুরুক্ষেত্রে পাঁচটি কুণ্ড প্রস্তুত করিয়া তাহাতে পিতার তর্পণ করিলে, তবে তাঁহার ক্রোধ কিঞ্চিৎ শান্ত হইল।
ক্ষত্রিয়েরাই ছিল পৃথিবীর রাজা; তাহাদিগকে বধ করিয়া তাঁহাদের সকলের রাজ্যই পরশুরামের হইল। সেই সব রাজ্য তখন তিনি মহর্ষি কশ্যপকে দান করিলেন। দান করিয়া তাঁহার মনে এই চিন্তা হইল যে সকলই তো পরের রাজ্য হইল। এখন কোথায় বাস করি? এই ভাবিয়া তিনি অস্ত্রদ্বারা সমুদ্রের জল সরাইয়া এক নূতন রাজ্যের সৃষ্টি করিলেন। তদবধি উহাই তাঁহার বাসস্থান হইল।
কৃষ্ণের কথা
পূতনা বলিয়া একটা বড়ই ভীষণ রাক্ষসী কংসের রাজ্যে বাস করত। ছোট ছোট ছেলেদিগকে কৌশলে বধ করাই ছিল ইহার ব্যবসায়। রাত্রিকালে কোনো খোকাখুকি এই হতভাগিনীর দুধ পান করিলে আর তাহাদের রক্ষা ছিল না। সে সব খোকাখুকির দেহ তখনই