জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। সেখানে আর কয়েকটি বালক ছিল, তাহারা খোকাকে দেখাইয়া বলিল, “এই খোকা পা ছুঁড়িতে ছুঁড়িতে গাড়ি উলটাইয়া ফেলিয়াছে আমরা দেখিয়াছি।” শুনিয়া সকলে হাঁ করিয়া একবার খোকার দিকে একবার গাড়িখানার দিকে তাকাইতে লাগিল।
খোকাটি একটু বড় হইলে তাহার ‘কৃষ্ণ’ নাম রাখা হইল। রোহিণীর খোকার নাম যে বলরাম’ তাহাও এই সময়ে রাখা হয়। কি দুরন্ত দুটি খোকাই তাহারা ছিল।
যখন কৃষ্ণ আর বলরাম একসঙ্গে হামাগুড়ি দিয়া বেড়াইতে শিখিলেন, তখন হইতে আর এক মুহূর্তের জন্যেও কাহারও নিশ্চিন্ত থাকিবার জো রহিল না। ছাই আর গোবর দেখিলেই দুটি খোকা অমনি তাহা লইয়া গায়ে মাখাইবে, যশোদার সাধ্য কি যে তাহাদিগকে বারণ করেন। একটু চোখের আড়াল হইলেই তাহারা গোয়াল ঘরে ঢুকিয়া ছোট ছোট বাছুরগুলির লেজ ধরিয়া টানাটানি আরম্ভ করিত। ইহাদের পিছুপিছু ছুটাছুটি করিয়া যশোদা নাকালের একশেষ হইতে লাগিলেন। শেষে একদিন তিনি আর কিছুতেই ইহাদিগকে সামলাইতে না পারিয়া, রাগের ভরে বকিতে বকিতে লাঠি হাতে কৃষ্ণকে তাড়া করিলেন। তারপর তাঁহাকে ধরিয়া মোটা দড়ি দিয়া একটা উদূখলের সঙ্গে বাঁধিয়া বলিলেন, “পালা দেখি এখন!”
এই বলিয়া যশোদা নিশ্চিন্ত মনে ঘরের কাজে গিয়াছেন, আর কৃষ্ণও অমনি সেই উদূখল টানিয়া উঠান পাড়ি দিতে আরম্ভ করিয়াছেন। উদূখল টানিতে টানিতে তিনি দুটি অর্জুন গাছের মধ্য দিয়া চলিয়া গেলেন। কিন্তু গাছ দুটি খুব কাছাকাছি থাকায় উদূখলটি সেখান দিয়া গলিতে না পারিয়া আটকাইয়া গেল। তখন কৃষ্ণের টানাটানিতে সেই প্রকাণ্ড গাছ দুটি মহাশব্দে ভাঙ্গিয়া পড়ায় সকলে ভাবিল না জানি কি হইয়াছে। তাহারা নিতান্ত ব্যস্তভাবে ছুটিয়া আসিয়া দেখিল যে খোকা দুইগাছের মাঝখানে বসিয়া, তাহার ছোট ছোট দাঁতকটি বাহির করিয়া হাসিয়া অস্থির, তাহার পেটের সঙ্গে দড়ি দিয়া উদূখল বাধা। সেই হইতে কৃষ্ণের একটি নাম হইল দামোদর, কিনা ‘পেটে দড়ি’ (দাম—দড়ি, উদর—পেট)। যা হোক, সে প্রকাণ্ড গাছ ভাঙ্গা যে সেই খোকার কাজ এ কথা কেহ বুঝিতে পারিল না। বুড়ারা বলিল, “এখানে বড়ই উৎপাত আরম্ভ হইয়াছে দেখিতেছি; গাড়ি উলটিয়া যায়, বিনা ঝড়ে গাছ ভাঙ্গিয়া পড়ে। এখানে আর থাকা উচিত নয়; চল আমরা বৃন্দাবনে চলিয়া যাই।” এই বলিয়া তখনই সকলে গোকুল ছাড়িয়া বৃন্দাবনে চলিয়া গেল।
শিবের বিয়ে
দুর্গার এক নাম ‘পার্বতী’, অর্থাৎ পর্বতের মেয়ে। তাঁর পিতা হিমালয়, মা মেনকা। শিবের সঙ্গে যাতে তাঁর বিয়ে হয়, এজন্য পার্বতী অনেকদিন ধরে কঠিন তপস্যা করেছিলেন, তার ফলে শেষে শিবের সঙ্গেই তাঁর বিয়ে হল।
পার্বতীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে শিব তাঁকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু বর যে, সে তো আর নিজের কনের বাপের কাছে গিয়ে বিয়ে ঠিক করতে পারে না, তাহলে লোকে হাসে! কাজেই শিব সপ্তর্ষিদের ডেকে পাঠালেন। সপ্তর্ষিরাও তখনই সোনার বল্কল পরে, মুক্তামালা