পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরাণের গল্প
৭১৯

আপনাকে ছাড়াইয়া দিতে পারি।”

 এ কথা শুনিয়া বলির ভারি হাসি পাইল। তারপর তিনি কথায় কথায় তাহাকে বলিলেন, “ঐ যে ঝক্‌ঝকে চাকাটি দেখিতেছ ওটি আমার কাছে লইয়া আইস তো?” এ কথায় রাবণ নিতান্ত অবহেলার সহিত গিয়া সেই জিনিসটি উঠাইল, কিন্তু কিছুতেই সেটিকে লইয়া আসিতে পারিল না। সে লজ্জিত হইয়া প্রাণপণে টানাটানি করিতে করিতে শেষে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া গেল।

 খানিক পরে রাবণের জ্ঞান হইয়াছে, কিন্তু তখন আর লজ্জায় বেচারা মাথা তুলিতে পারে না। তখন বলি তাহাকে বলিলেন, “এই চাকাটি আমার পুর্বপুরুষ হিরণ্যকশিপুর কুণ্ডল।”

 আর একবার রাবণ পশ্চিম সমুদ্রে গিয়া একটি দ্বীপে আগুনের মতো তেজস্বী এক ভয়ংকর পুরুষকে দেখিল। তাঁহাকে দেখিয়াই রাবণ বলিল, “যুদ্ধ দাও।” তারপর সে তাঁহাকে কত শূল, কত শক্তি, কত ঋষ্টি, কত পট্টিশের ঘা মারিল, কিন্তু তাঁহার কিছুই করিতে পারিল না। তখন সেই ভয়ংকর পুরুষ রাবণকে টিকটিকির মতন ধরিয়া দুহাতে এমনি চাপিয়া দিলেন যে তাহাতেই তাহার প্রাণ যায় যায়। তারপর তিনি তাহাকে মাটিতে ফেলিয়া পাতালে চলিয়া গেলেন। কিঞ্চিৎ পরে রাবণ উঠিয়া রাক্ষসদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, “সেই ভয়ংকর লোকটা কোথায় গেল?” রাক্ষসেরা একটা গর্ত দেখাইয়া বলিল, “সে ইহারই ভিতরে ঢুকিয়া গিয়াছে।” অমনি রাবণও তাড়াতাড়ি সেই গর্তের ভিতর ঢুকিল। তারপর পাতালের মধ্যে খুঁজিতে খুজিতে এক জায়গায় গিয়া দেখিল সেই মহাপুরুষ একটা খাটের উপর ঘুমাইয়া আছেন। সেখানে গিয়া রাবণ সবে দুষ্ট ফন্দি আঁটিতেছে, এমন সময় সেই ভয়ংকর পুরুষ হো হো শব্দে হাসিয়া উঠিলেন, আর তাহাতেই রাবণ কানে তালা লাগিয়া মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গেল। তখন ভয়ংকর পুরুষ তাহাকে বলিলেন, “আর কেন? এই বেলা চলিয়া যাও! ব্রহ্মা তোমাকে অমর হইবার বর দিয়াছেন। কাজেই তোমাকে বধ করা হইল না।” এই ভয়ংকর পুরুষ ছিলেন ভগবান কপিল।

 আর একবার রাবণ গিয়াছিল মাহিষ্মতীর রাজা অর্জুনের সহিত যুদ্ধ করিতে। মাহিষ্মতীতে গিয়া সে অর্জুনের মন্ত্রীদিগকে বলিল, “তোমাদের রাজা কোথায়? আমি তাহার সহিত যুদ্ধ করিব।” মন্ত্রীরা বলিলেন, “তিনি বাড়ি নাই।”

 এ কথায় রাবণ সেখান হইতে বিন্ধ্যপর্বতে চলিয়া আসিল। বিন্ধ্য অতি সুন্দর পর্বত। সেই পর্বতের নীচ দিয়া নর্মদা নদী বহিতেছে, তাহার শোভা দেখিলে চক্ষু জুড়াইয়া যায়। এমন নির্মল জল, এমন শীতল বায়ু, এতরকমের ফুল আর অতি অল্পস্থানেই আছে। রাবণ মনের সুখে সে জলে নামিয়া স্নান করিল।

 ঠিক সেই সময়ে একটা ভারি আশ্চর্য ঘটনা ঘটিতেছিল। নর্মদার জল স্বভাবতই পূর্ব হইতে পশ্চিম দিকে বহিয়া থাকে, কিন্তু সেদিন দেখা গেল যে তাহা এক একবার হঠাৎ উঁচু হইয়া পশ্চিম হইতে পূর্ব দিকে ফিরিয়া আসিতেছে। ইহাতে রাবণ যারপরনাই আশ্চর্য হইয়া শুক সারণকে বলিল, “দেখ তো ব্যাপারটা কি?”

 শুক সারণ তখনই পশ্চিম দিকে চলিয়া গেল, আর খানিক পরেই ব্যস্তভাবে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, মহারাজ, প্রকাণ্ড শালগাছের মতো উঁচু একটা লোক নর্মদায় নামিয়া স্নান করিতেছে। উহার এক হাজারটা হাত। সেই হাজার হাতে সে এক একবার নদীর জল