সেই মাঠের কাছে এক শিয়াল থাকত। সে অনেক দিন পেট ভরে খেতে পায়নি। মাঠে মরা হাতি দেখতে পেয়ে, সে খুব খুশি হয়ে এসে, তাকে খেতে আরম্ভ করল। তার এতই খিদে হয়েছিল যে, খেতে-খেতে সে হাতির পেটের ভিতরে ঢুকে গেল, তবুও তার খাওয়া শেষ হল না। এমনি করে দুদিনে চলে গেল, তখনো সে হাতির পেটের ভিতরে বসে কেবল খাচ্ছেই। ততদিন রোদ লেগে চামড়া শুকিয়ে, হাতির পেটের ফুটো ছোট হয়ে গেছে, আর শিয়ালও অনেক খেয়ে মোটা হয়ে গেছে। তখন তো তার ভারি মুশকিল হল। সে অনেক চেষ্টা করেও হাতির পেটের ভিতর থেকে বেরোতে পারল না। এখন উপায় কি হবে?
এমন সময় তিনজন চাষী সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দেখতে পেয়েই শিয়ালের মাথায় এক ফন্দি জোগাল। সে হাতির পেটের ভিতর থেকে তাদের ডেকে বললে, ‘ওহে ভাই সকল, তোমরা রাজার কাছে একটা খবর দিতে পারবে? আমার পেটে যদি পঞ্চাশ কলসী ঘি মাখানো হয়, তবে আমি উঠে দাঁড়াব।’
চাষীরা তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘শোন-শোন, হাতি কি বলছে! চল রাজামশাইকে খবর দিইগে।’ তারা তখুনি রাজার কাছে ছুটে গিয়ে বললে, ‘রাজামশাই, আপনার সেই মরা হাতি বলছে যে তার পেটে পঞ্চাশ কলসী ঘি মাখালে সে আবার উঠে দাঁড়াবে। শিগগির পঞ্চাশ কলসী ঘি পাঠিয়ে দিন।’
এ কথায় রাজামশাই যে কি খুশি হলেন, কি আর বলব! তিনি বললেন, ‘আমার হাতি যদি বাঁচে, পঞ্চাশ কলসী ঘি আর কত বড় একটা কথা! হাজার কলসী ঘি নিয়ে তার পেটে মাখাও।’ তখুনি হাজার মুটে হাজার কলসী ঘি নিয়ে মাঠে উপস্থিত করল। দুহাজার লোক মিলে সেই ঘি হাতির পেটে মাখাতে লাগল। সাতদিন খালি ‘আনো ঘি’, ‘ঢাল ঘি’ ছাড়া সেখানে আর কোনো কথাই শোনা গেল না।
সাতদিনের পরে শিয়াল দেখলে যে, হাতির চামড়াও ঢের নরম হয়েছে, পেটের ফুটোও ঢের বড় হয়েছে, এখন সে ইচছা করলেই বেরিয়ে আসতে পারে। তখন সে সকলকে ডেকে বলল, ‘ভাই সকল, এইবার আমি উঠব। তোমরা একটু সরে দাঁড়াও, নইলে যদি আমি মাথা ঘুরে তোমাদের উপরে পড়ে টড়ে যাই!’
তখন ভারি একটা গোলমাল হল। যে যাকে সামনে পাচ্ছে, তাকেই ধাক্কা মেরে বলছে, ‘আরে বেটা, শিগগির সর! হাতি উঠছে, ঘাড়ে পড়বে।’
একথা শুনে কি কেউ আর সেখানে দাঁড়ায়? ঘি-টি সব ফেলে তারা পালাতে লাগল,