ঘাড়ে চড়ে বেড়ায়। সে বেচারারা তার ভয়ে একেবারে জড়-সড় হয়ে থাকে, আর তাকে মনে করে, না জানি কত বড় লোক!
একদিন বাঘিনী তাকে হাতজোড় করে বললে, মজন্তালী মশাই, এ বনে খালি ছোট-ছোট জানোয়ার, এতে কিছু আপনার পেট ভরে না। নদীর ওপারে খুব ভারি বন আছে, তাতে খুব বড় বড় জানোয়ার থাকে। চলুন সেখানে যাই।’
শুনে মজন্তালী বললে, ‘ঠিক কথা! চল ওপারে যাই।’ তখন বাঘিনী তার ছানাদের নিয়ে, দেখতে-দেখতে নদীর ওপারে চলে গেল। কিন্ত মজন্তালী কই? বাঘিনী আর তার ছানারা অনেক খুঁজে দেখল- ঐ মজন্তালী সরকার নদীর মাঝখানে পড়ে হাবু-ডুবু খাচ্ছে! স্রোতে তাকে ভাসিয়ে সেই কোথায় নিয়ে গিয়েছে, আর ঢেউয়ের তাড়ায় তার প্রাণ যায়-যায় হয়েছে!
মজন্তালী তো ঠিক বুঝতে পেরেছে যে, আর দুটো ঢেউ এলেই সে মারা যাবে। এমন সময় ভাগ্যিস বাঘিনীর একটা ছানা তাকে তাড়াতাড়ি ডাঙ্গায় তুলে এনে বাচাল, নইলে সে মরেই যেত, তাতে আর ভুল কি?
কিন্ত মজন্তালী সরকার তাদের সে কথা জানতেই দিল না। সে ডাঙায় উঠে ভয়ানক চোখ রাঙিয়ে বাঘের ছানাকে চড় মারতে গেল, আর গাল যে কত দিল, তার তো লেখাজোখাই নেই। শেষে বললে, ‘হতভাগা মূর্খ, দেখ্ দেখি কি করলি! আমি অমন চমৎকার হিসাবটা করছিলুম, সেটা শেষ না হতেই তুই আমাকে টেনে তুলে আনলি-আর আমার সব হিসাব গুলিয়ে গেল! আমি সব গুনছিলুম, নদীর কটা ঢেউ, কতকগুলো মাছ আর কতখানি জল আছে। মূর্খ বেটা, তুই এর মধ্যে গিয়ে সব গোলমাল করে দিলি! এখন যদি আমি রাজামশাইয়ের কাছে গিয়ে এর হিসাব দিতে না পারি, তবে মজাটা টের পাবি!’
এসব কথা শুনে বাঘিনী তাড়াতাড়ি এসে হাত জোড় করে বললে, ‘মজন্তালী মশাই, ঘাট হয়েছে, এবারে মাপ করুন। ওরা মূর্খ, লেখাপড়া জানে না, তাই কি করতে কি করে ফেলেছে!’
মজন্তালী বললে, ‘আচ্ছা এবারে মাপ করলুম! খবরদার! আর যেন কখনো এমন হয় না!’ এই বলে মজন্তালী তার ভিজে গা শুকোবার জন্য রোঁদ খুঁজতে লাগল।
গভীর বনের ভিতরে সহজে রোদ ঢুকতে পায় না। সেখানে রোদ খুঁজতে গেলে উঁচু গাছের আগায় গিয়ে উঠতে হয়। মজন্তালী একটা গাছের আগায় উঠে দেখলে যে, খুব বড় একটা মরা মহিষ মাঠের মাঝখানে পড়ে আছে। তখন সে তাড়াতাড়ি গিয়ে সেই মহিষটার গায়ে কয়েকটা আঁচর কামড় দিয়ে এসে বাঘিনীকে বললে, ‘শিগগির যা আমি একটা মোষ