এর বিচার করুন! আমরা তিনশো লোক আপনার হাতি টেনে হাঁপিয়ে গেলুম, আর এই বেটা বলছে কিনা, সে একলাই সেটা নিয়ে যেতে পারে। এর বিচার না হলে আমরা আপনার হাতি ছোঁব না।’
একথা শুনেই রাজামশাই বামুনের চাকরকে বললেন, ‘কি রে, সত্যি কি তুই ঐ হাতি একলা নিয়ে যেতে পারিস?’
চাকর জোড়হাতে নমস্কার করে বললে, ‘মহারাজের যদি হুকুম হয়, তবে পারি বইকি! কিন্ত আগে আমাকে পেট ভরে চারটি খেতে দিতে হবে।’
রাজা বললেন, ‘দাও তো ওকে এক সের চাল আর ডাল তরকারি। আগে পেট ভরে খেয়ে নিক, তারপর হাতি নিয়ে যেতে হবে।’
তাতে সে চাকর হেসে বললে, ‘এক সের চাল তো ঝাড়ুওয়ালা খায়-তাতে কি হাতি টানা চলে?’
রাজা বললেন, ‘তবে তুই কি চাস?’
চাকর বললে, ‘মহারাজ, বেশি আর কি চাইব?-এই মণ দুই চাল, দুটো খাসী আর এক মণ দই হলেই চলবে।’
রাজা বললেন, ‘আচ্ছা তাই পাবি, কিন্ত খেতে হবে সব।’
চাকর বললে, ‘যে আজ্ঞে মহারাজ!’
বামুনের চাকর সেই দু মণ চালের ভাত আর দুটো খাসী, আর এক মণ দই নিয়ে পেট ভরে খেয়ে তো আগে খুব এক চোট ঘুমিয়ে নিল।
তারপর নিজের গামছাখানি দিয়ে সেই হাতিটাকে জড়িয়ে, বেশ করে একটি পুঁটলি বাঁধল। তারপর পুঁটলিকে লাঠির আগায় ঝুলিয়ে, সেই লাঠিসুদ্ধ সেই পুঁটুলি কাঁধে ফেলল। তারপর গণ্ডা দশেক পান মুখে গুঁজে গান গাইতে গাইতে গঙ্গায় চলল। তা দেখে রাজামশাই হাঁ করে রইলেন, আর তিনশো লোক হাঁ করে রইল, আর সকলে ছুটে বাড়িতে খবর দিতে গেল!
ততক্ষণে সে চাকর অনেক দূরে চলে গিয়েছে, আর খুব চনচনে রোদ উঠেছে। আরো অনেক দূর গিয়ে চাকর বললে, ‘উঃ কি ভয়ানক রোদ! আমার গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেতে পেলে হত।’
বলতে-বলতেই সে দেখল যে খানিক দূরে একটি পুকুর রয়েছে, সেই পুকুরের ধারে গাছপালার আড়ালে একটি কুঁড়ে ঘর। চাকরটি পুকুরের ধারে তার পুঁটুলিটি রেখে, সেই ঘরের কাছে গিয়ে দেখলে, সেখানে একটি ছোট মেয়ে বসে আছে।
সে সেই মেয়েটিকে বললে, ‘বাছা, আমার বড্ড তেষ্টা পেয়েছে, একটু জল খেতে দেবে?’ মেয়েটি বললে, ‘মোটে এক জলা জল আছে। তোমাকে যদি দিই, তবে বাবা মাঠ থেকে এসে কি খাবেন?’
একথা শুনে চাকর রেগে বললে, ‘বটে! তুই একটু জল খেতে দিবিনে? আচ্ছা, দেখি এরপর তোরা কোত্থেকে জল খাস!’