এই বলে সে সেই পুকুরে নেমে, চোঁ-চোঁ করে জল খেতে লাগল। যতক্ষন সেই পুকুরে জল ছিল, ততক্ষণ খালি চোঁ-চোঁ শব্দ শোনা গিয়েছিল! দেখতে-দেখতে সে সেই এক পুকুর জল খেয়ে শেষ করল! জল খেতে-খেতে তার পেটটা ফুলে আগে ঢাকের মতো হলো, তারপর হাতির মতো হলো, শেষে একেবারে পাহাড়ের মতো হয়ে গেল। এমনি করে পুকুরের সব জল খেয়ে বামুনের চাকর দেখল যে, সে জল আর কিছুতেই তার পেটে থাকতে চাচ্ছে না। তখন সে আর কি করবে, তাড়াতাড়ি একটা বটগাছ গিলে ফেলল। সেই বটগাছ তার গলার মাঝামাঝি গিয়ে ছিপির মতো আটকে রইল-জল আর বেরুতে পারল না।
তারপর বামুনের চাকর খুব খুশি হয়ে, সেই পুকুরের ধারে শুয়ে বিশ্রাম করতে লাগল। তার পেটটা তালগাছের চেয়েও উঁচু হয়ে উঠল, যেন একটা পাহাড়! সেই মেয়েটির বাপ তখন মাঠে কাজ করছিল। সে সেই পাহাড়ের মতো পেট দেখে ভাবল, ‘বাবা, না জানি ওটা কি!’ বলে সে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ছুটে এল।
সে বাড়িতে আসতেই তার মেয়ে বললে, ‘বাবা, দেখ কি দুষ্টু লোক! আমার কাছে জল চেয়েছিল। ঘরে এক জালা বই জল নেই, ওকে দিলে তুমি এসে কি খাবে? তাই আমি জল দিইনি বলে আমাদের পুকুরের সব জল খেয়ে ফেলেছে!’
বলতে-বলতে তারা দুজনে সেই চাকরের কাছে এল। সেখানে এসে সে মেয়েটি ভয়ানক নাক সিঁটকিয়ে বললে, উঃ হুঁহুঁ! কি গন্ধ! দেখ বাবা, একটা পঁচা ইঁদুর না কি পুঁটুলিতে বেঁধে এনেছে!’ এই বলে সে এক হাতে নাকে কাপড় দিয়ে, আর এক হাতের দু-আঙুলে সেই হাতিসুদ্ধ পুঁটুলিটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। সে পুঁটুলি পড়ল গিয়ে একেবারে সেই গঙ্গায়!
আর মেয়ের বাপ করেছে কি! কষে কোমড় বেঁধে মুখ খামুটি করে মেরেছে বামুনের চাকরের পেটে এক লাথি! সে কি যেমন তেমন লাথি! লাথির চোটে, সেই বটগাছের চিপিসুদ্ধ তার পেটের সব জল বেরিয়ে ঘর-বাড়ি, জিনিস-পত্র, মেয়ে-টেয়ে একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে গেল! বাকি রইল খালি মেয়ের বাপ আর বামুনের চাকর। তখন তারা দুজনে মিলে কোলাকুলি করতে লাগল।
কোলাকুলি শেষ হলে সেই মেয়ের বাপ বললে, ‘আরে ভাই, ‘তোর মতন জোয়ান তো আর কোথাও দেখিনি! এক পুকুর জল খেয়ে সব শেষ করলি!’
বামুনের চাকর বললে, ‘ভাই, তোর মতন জোয়ানও তো আমি আর কোথাও দেখিনি।