পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক লাথিতে আমার পেট হালকা করে দিলি!’

এই কথা নিয়ে তখন তাদের মধ্যে ভারি তর্ক আরম্ভ হল। এ বলে তুই বেশি জোয়ান, ও বলে তুই বেশি জোয়ান। এখন কার কথা ঠিক, তা কে বলবে!

অনেক তর্ক করে তারা এই ঠিক করলে, ‘চল একটা খুব বড় বাজারে গিয়ে দুজনে কুস্তি লড়ি, তাহলেই দেখা যাবে কে বেশি জোয়ান!’

এই বলে তারা দুজন কুস্তি লড়তে বাজারে চলেছে, এমন সময় এক মেছুনীর সঙ্গে তাদের দেখা হল। মেছুনী ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে বাজারে বেচতে যাচ্ছিল। তাদের দুজনকে দেখে জিগগেস করলে, ‘হ্যাঁ গা, তোমরা কোথা যাচ্ছ?’

তারা বললে, বাজারে যাচ্ছি কুস্তি লড়তে।’

তা শুনে মেছুনী বললে, ‘বাজার তো ঢের দূর বাছা, এত কষ্ট করে তোরা সেখানে যাবি কি করতে? তার চেয়ে আমার ঝুড়ির ভিতর এসে কুস্তি কর। কুস্তি করতে-করতে যার দিকে ঝুড়ি ঝুঁকে পড়বে, আমি জানব তারই হার হয়েছে।’

শুনে তারা দুজনে বললে, ‘বাঃ বেশ কথা! কুস্তিও করতে পার, হাঁটতেও হবে না।’

এই বলে তারা মেছুনীর ঝুঁড়িতে ঢুকে কুস্তি আরম্ভ করল, আর মেছুনী সেই ঝুড়ি মাথায় করে বাজারে চলল।

এমন সময় এক কাণ্ড হয়েছে। সেই দেশে এক সর্বনেশে চিল থাকত। সে গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া যা পেত তাই ধরে গিলত। খালি সেই মেছুনীর কাছে সে জব্দ ছিল। মেছুনীর ঝুড়ি ধরতে এলেই, মেছুনী তাকে এমনি বকুনি দিত যে, সে পালাবার পথ পেত না। কিন্তু তাতে তার রাগ আরো বেড়ে যেত আর ভাবত যে, যেমন করেই হোক একদিন ঐ ঝুঁড়িটা কেড়ে নিতেই হবে।

সেদিনও সেই চিল খাবার খুঁজতে বেরিয়েছে, দূর থেকে তার পাখার শোঁ-শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে।

এক গোয়ালা সাতশো মোষ মাঠে চরাতে এনেছিল। সে সেই শব্দ শুনে ভাবলে, ‘সর্বনাশ! ঐ সেই চিল আসছে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে। এখন কি করি?’

এই ভেবে গোয়ালা সেই সাতশো মোষ ট্যাঁকে গুঁজে নিয়ে, ভোঁ-ভোঁ করে বাড়ির পানে ছুটল।

বাড়ির লোক জিগগেস করল, ‘কি হয়েছে? অত যে ছুটে এলে?’

সে বললে, ‘ছুটব না! চিল আসছে যে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে।’

তারা বললে, তবে মোষ কোথায় রেখে এলে?’

সে বললে, ‘রেখে আসব কেন? সঙ্গে এনেছি।’

তারা বললে, ‘তবে কই মোষ?’

সে বললে, ‘এই দেখ না।’

বলে সে ট্যাঁক খুলে দিলে, আর সাতশো মোষ তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল।

তা দেখে তারা খুব খুশি হয়ে বললে, ‘ভাগ্যিস তুমি ট্যাঁকে করে নিয়ে এসেছিলে, নইলে