পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৩১

মাকড়সা

 অনেকে মাকড়সা মারাকে অবশ্য কর্তব্যকর্ম মনে করেন। ‘মাকড়সা মেরো না’ বলিলে তাঁহারা হয়তো চমকিয়া উঠেন। মাকড়সার পূর্বপুরুষ কেহ বড়লোক ছিল না, সুতরাং বেচারা আমাদের নিকট আদর পায় না।

 মাকড়সা দেখিতে অনেকটা কাঁকড়ার মতো। পিঁপড়ে প্রভৃতির সঙ্গেও কিছু সাদৃশ্য আছে। একটা গোল আঁক দিয়া তার চারিদিকে আটখানি পা বসাইয়া দিলেই মনে করিতে পার একটি কাঁকড়া হইল। কাঁকড়ার পেছনে আর একটি গোলাকার রেখা সংযুক্ত কর মাকড়সার কাছাকাছি যাইবে! মাকড়সার মাথায় বড় পাগড়ি থাকিলে পিঁপড়ে জাতীয় পোকার মতো দেখা যাইত—তবে ঠ্যাং দুখানা বেশি হইত। মাকড়সার মুখে ভয়ানক দুটি অস্ত্র; তার দু-একটি ‘চিটি খাইলে হয়তো বড় সুবিধা বোধ করিবেন না। এই দুইটিকে মাকড়সার সাঁড়াশী (দাঁত নয়) বলা যাইতে পারে। যুদ্ধ এবং শিকারের সময় এইগুলি কাজে আসে। মাথায় বড়-বড় দুটি চোখ। তার আশেপাশে’ খুঁজিলে ছোট ছোট আরো চার-পাঁচটি দেখিতে পাইবে। যদি জিজ্ঞাসা কর, “এত চোখ কেন?” আমি বলিব, “জানি না।”

 মাকড়সার নাম লইলেই তাহার জালের কথা মনে পড়ে। জালে দুই কাজই চলে; বাড়ি করিয়া থাকা হয়, শিকারেরও সাহায্য হয়। মাকড়সার পেটের উপর গোরুর বাঁটের মতো ছোট-ছোট কয়েকটি বাট আছে। এই বাটের মুখ দিয়া একপ্রকার আঠা বাহির হয়। তাহাই বাতাসে শক্ত হইয়া দড়ির কাজ করে। এই দড়ি দিয়া জাল তৈরি হয়। এর এক-একটা এত সরু যে চোখে দেখা যায় না, তবুও বড়-বড় মাকড়সা তাহাতে ঝুলিয়া থাকে। কোনো হতভাগ্য পোকা একবার যদি মাকড়সার জালে পড়িল তবে তাহার রক্ষার সম্ভবনা অল্পই থাকে। হুড়োহুড়ি যত বেশি করে ততই গোলমাল আরো বাড়িতে থাকে। শেষে নিরূপায় হইয়া পড়ে। জালওয়ালা এতক্ষণ মধ্য হইতে শান্তভাবে চাহিয়াছিল। যেই দেখিল জোগাড়টা পাকাপাকি হইয়াছে অমনি আস্তে আস্তে কাছে আসিল। দড়ি সঙ্গেই আছেচারিদিক উত্তমরূপে দেখিয়া অম্লান বদনে হতভাগ্যকে বাঁধিতে লাগিল। বাঁধা শেষ হইলে আহার। মাথা ছিড়িয়া শরীরের রস চুষিয়া লয়, আর কিছু খায় না; মাঝে মাঝে দুই-একটা বোলতা আসিয়া জালে পড়ে। তখন আমাদের ইনি মনে করেন আপদ গেলেই বাঁচি! বোলতা চড্‌পড্‌ করিয়া জালের খানিকটা ছিঁড়িয়া পালায়।

 জালের কোনো অংশ ছিড়িয়া গেলে ‘লোকটা’ যত্নপূর্বক তক্ষণাৎ তাহা মেরামত করিয়া রাখে। এক জাল অকর্মণ্য হইয়া গেলে আর-একটা করিয়া লয়। এরূপে দড়ির পুঁজি ফুরাইয়া যায়। তখন প্রতিবেশী কেহ থাকিলে তাহাকে তাড়াইয়া দিয়া তাহার জাল দখল করে। অনন্যর জাল নিকটে না থাকিলে কি করে? গোল্ডস্মিথ সাহেবের মনেও এই প্রশ্ন হইয়াছিল। তিনি একটা মাকড়সার পেছনে লাগিলেন। সে তাঁহার থাকিবার ঘরেই বাড়ি করিয়াছিল। তিনি তাহার সমস্ত জাল ভাঙ্গিয়া তাহাকে সেখান হইতে তাড়াইয়া দিলেন। সে বারবার জাল গড়িতে লাগিল, সাহেবও ভাঙ্গিতে ত্রুটি করিলেন না। একটা পোকার পেটে আর কত দড়ি