পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বেচারার চক্ষু দুটি নষ্ট করিয়া ফেলিল। পরদিন সকালে বেচারা যাতনায় ছটফট করিতেছে এরূপ অবস্থায় তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া হইল।

 এক সপ্তাহ কাল গেল। কর্তার অমঙ্গল যেন জো পাইল। গোরু ক্রমাগত মরিতে লাগিল। শেষটা ওঝা আসিয়া বলিলেন, “ওগো আমি আর পারি নে। তোমায় বড় ভূতে পেয়েছে আমার আর সাধ্যি নেই।”

 আটদিনের দিন ভয়ানক তুফান হইল। মাঝে মাঝে বিরামের সময় দরজার নিকট কান্নার শব্দের মতো শব্দ শুনা যাইতে লাগিল। সকালে দরজা খোলা হইল। সিঁড়ির উপর সীলটি মরিয়া পড়িয়া রহিয়াছে।


শেয়ালের গল্প

 মানুষের মধ্যে নাপিত যেমন, পাখির মধ্যে কাক যেমন, দেবতাদের মধ্যে নারদ মুনিঠাকুর যেমন ছিলেন, লোকে বলে জানোয়ারদের মধ্যে শেয়াল তেমন। শেয়াল পণ্ডিত সেকালে তাহার কত প্রতাপই ছিল। কুমিরের সাত ছেলে; শুনিয়াছি সবগুলিকে নাকি শেয়ালের নিকট পড়াইতে দেওয়া হইয়াছিল। শেয়ালপণ্ডিতও স্ত্রীর সঙ্গে যুক্তি করিয়া সাতদিনে সাতটার সদ্গতি করিয়াছিল। তারপর কি হইল সকলেই জানে। কিন্তু পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে এখন আর শেয়ালের সেদিন নাই। ইস্কুলে যত মাস্টারি খালি হয়, একটা শেয়ালকেও তাহাতে দরখাস্ত পাঠাইতে শুনি না। কত শক্ত মোকদ্দমা উপস্থিত হয়, এখন আর তাহার মীমাংসার জন্য শেয়ালের কাছে যাওয়া হয় না। তবুও শেয়ালের যাহা আছে তাহাতে নাম রক্ষার কাজ চলে।

 শুনিয়াছি শেয়াল কুকুরের জাতি। হইতেও পারে; নহিলে তাহাদের মধ্যে এত শত্রুতা কেন? তা ছাড়া অনেক সময় কুকুর ঠিক শেয়ালের মতন ডাকিতে পারে; শেয়ালও মাঝে মাঝে কুকুরের ভাষায় আলাপ করিয়া থাকে। শেয়ালের ডাক সম্বন্ধে অনেকে কথা কহিয়া থাকেন। অনেকে ঐ ডাকের অর্থ বেশ বুঝিতে পাবেন। আমি বহু অনুসন্ধানে তিনপ্রকারের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করিয়াছি:—

 ১. প্রথম শেয়ালের পায়ে কাঁটা ফুটিল। সে কাঁদিল—“উ!আ!” দূর হইতে অন্য শেয়াল জিজ্ঞাসা করিল “ক্যা হুয়া?” গোলমাল শুনিয়া অন্যেরা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল “ক্যাক্যাক্যাক্যা হুয়া?” তারপর সকলে মিলিয়া কতক্ষণ “আহা” “আহা” করিল; শেষে আহত শেয়ালকে এই বলিয়া সান্ত্বনা করিল যে, “হুয়া তো হুয়া!”

 ২. প্রথম শেয়াল বলিল, “আরে ওয়া? হা হ-হা!” দ্বিতীয় শেয়াল জিজ্ঞাসা করিল, “ক্যা। হয়া?” উত্তর হইল, “মৈ রাজা হুয়া,” শুনিয়া সকলে মিলিয়া আনন্দ প্রকাশ করিতে লাগিল, “আচ্ছ হুয়া!” “আচ্ছা হুয়া!”

 ৩. শেয়াল অন্য জন্মে তামাকখোর ছিল। অধুনা সে-সুখ হইতে বঞ্চিত হইয়া ভয়ানক কষ্ট পাইতেছে। তাই প্রহরে প্রহরে সেই হুঁকো যন্ত্রের কথা তাহার মনে হয়;আর বেচারা ঘন ঘন “হুক্কা” “হুক্কা” শব্দ উচ্চারণপূর্বক মনের অভাব জানায়।

 প্রতি প্রহরেই শেয়াল ডাকে তাহাতেই তাহাকে যামঘোষ উপাধি প্রদান করা হইয়াছে। শেয়ালের ডাক শুনিয়া এক রাজার মনে বড়ই কষ্ট হইল; তিনি মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,