পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভোঁদড়

 অনেক স্থানেই ভোঁদড় দেখিতে পাওয়া যায়। তোমাদের অনেকেই কলিকাতার পশুশালায় গিয়াছ সেখানে একটা গোল চৌবাচ্ছায় যে কয়েকটা ভোঁদড় রাখা হইয়াছে তাহাদের কাছে দশ-পাঁচ মিনিট দাঁড়াইয়াছ কি? আমি যতদিন সেগুলিকে দেখিতে গিয়াছি, একদিনও তাহাদের কোনোটাকে স্থির হইয়া বসিতে দেখি নাই। একবার ডুব দেওয়া আর কিছুদূর গিয়া মুখ ভাসাইয়া পুনরায় ডুব দেওয়া, কাজের মধ্যে ত এই ইহা লইয়াই বেচারারা এত ব্যস্ত যে, দেখিলে বোধহয় ঐ জলটুকুর প্রত্যেক পরমাণুর সহিত তাহাদের পরিচয় থাকার উপরই ব্রহ্মাণ্ড নির্ভর করিতেছে। তোমরা ইহা দেখিয়া হয়তো মনে করিয়াছ যে, ঐরূপ করিযা তাহারা জলের ভিতর মাছ খোঁজে। কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে। মাছ খুঁজিতে হইলেও ঐরূপ করা সম্ভব বটে, কিন্তু অধিকাংশ সময় কেবল আমোদ করিবার জন্যই ইহারা ঐরূপ করিয়া থাকে।

 ভোঁদড়গুলি অত্যন্ত আমোদপ্রিয়। স্বাধীন অবস্থায় তাহাদের বাসস্থানের নিকটবর্তী জলার ধারে পরিবারস্থ সকলে মিলিয়া যখন খেলা কবে, তখন তাহাদিগকে দেখিলে বোধহয় যেন পৃথিবীতে তাহাদের চাইতে সুখী জীব আর নাই। আমি বন্য ভোঁদড়ের খেলা কখনো স্বচক্ষে দেখি নাই, কিন্তু যাহারা দেখিয়াছেন তাঁহারা বলেন যে, তাহার চাইতে আমোদজনক দৃশ্য বড় অধিক নাই। দিনের বেলায় কিন্তু ইহারা তত মন খুলিয়া আমোদ করিতে পারে না, সূর্য অস্ত গেলেই তাহাদের আনন্দের সময় হয়। তাহাদের খেলার একটা বেশ নিয়ম আছে। প্রথমে সংগীত তারপর ব্যায়াম। কোনো কোনো সময় ব্যায়াম এবং সঙ্গীত এক কালেই চলিতে থাকে। তাহারা কোন্ রাগিনী কোন্ তাল অবলম্বন করিয়া কি গান গায়, তাহা আমি বলিতে সক্ষম নহি তবে ব্যাপারটা কিরূপ হয় তাহার কিঞ্চিৎ আভাস দিতেছি। অনেক ছেলের গান গাইবার একটা বাতিক আছে। তাহাদের গানে পৃথিবীর সকল প্রকারের রাগিনী এবং সকল প্রকারের তালই সময়ে ব্যবহার হয়। মনে কর এইরূপ কুড়িজন ছেলে তিন রাত্রি বাহিরে বসিয়া চ্যাঁচাইল, আর হিম লাগিয়া তাহাদের গলা বসিয়া গেল—এখন কথা কহিতে গেলে কেবল একটা সাঁই সাঁই শব্দ মাত্র শুনিতে পাওয়া যায়। এখন যদি এই কুড়িজন ছেলে রাত্রিতে নদীর ধারে কোনো নির্জন বনে গিয়া গান গায়, আর ম্যাও ম্যাও করে, আর শেয়ালের ডাক ডাকে, আর কাশে, আর নাকে কাটি দিয়া ফ্যাঁচ্‌ ফ্যাঁচ করিয়া হাঁচে, তবে ভোঁদড়-পরিবারের গানের নকল করিতে পারে। ইহাদের ব্যায়াম টুটাবাজি। তোমাদের ব্যায়াম-শিক্ষক হয়তো তোমাদিগকে দুই-তিনজনে মিলিয়া মাটির উপর উল্টাবাজি করিতে হইলে কিরূপ করিতে হয় তাহা বলিয়া দিয়াছে। না দিয়া থাকিলেও আমাদের দেশী বাজিকরদিগকে ঐরূপ করিতে অবশ্যই দেখিয়াছ। ভোঁদড়েরা কুড়ি-পঁচিশটি মিলিয়া একটা পিণ্ডের আকার ধারণপূর্বক ঐ বাজি করে। তবে তোমাদের উদাবাজিতে আর তাহাদের উল্টাবাজিতে একটু তফাত আছে। তোমরা সমান জমির উপর উল্টাবাজি কর, তাহারা ডাঙ্গার হইতে উল্টাবাজি করিয়া গড়াইয়া জলে পড়ে।