পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৩৯

বিশেষ কিছুই নাই, কিন্তু গরিলা মনে করে যে এত বড় জানোয়ারের আহারের পর তাহার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না। এই কারণেই সে হাতির উপর এত চটা। এই কারণেই সে হাতি দেখিবামাত্র লাঠি হাতে তাড়া করে। প্রাণপণে হাতির শুড়ের উপর একটি আঘাত করিলে আর দ্বিতীয় আঘাতের দরকার হয় না, হাতি ফ্যাঁ ফ্যাঁ শব্দ করিয়া পলায়ন করে।

 সে দেশের লোকেরা হাতির হাড় খুঁজিতে মাঝে মাঝে বনে যায়। তখন তাহাদের একটি ভয় বড়ই প্রবল থাকে—পাছে জঙ্গলে কখনো একটা গরিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। গরিলা পথের ধারে গাছের পাতার ভিতরে লুকাইয়া থাকে। দৈবাৎ কোনো হতভাগ্য লোক যদি সেই পথ দিয়া যায়, তবে আর তাহার রক্ষা নাই। দুই পায়ে গাছের ডাল শক্ত করিয়া ধরিয়া মুহূর্তের মধ্যে হাত বাড়াইয়া তাহাকে গাছে তুলিয়া লয়, তাহার পরক্ষণেই দুই হাতে তাহাকে বেষ্টন করিয়া প্রচণ্ড বলের সহিত বুকের উপর চাপিয়া ধরে আর তাহার পাঁজর চুর্ণ করিয়া মাটিতে ফেলিয়া দেয়।

 মাঝে মাঝে কেহ কেহ গরিলা মারিতে চেষ্টা করেন। এক গুলিতে যদি গরিলা মরিল, তবে ভালোই। কিন্তু যদি গুলি খাইয়াও তাহার শরীরে প্রাণ থাকে, তবেই বিপদ। এ সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনিতে পাওয়া যায়। একবার একটা গরিলা মরিবার সময় একটা বন্দুকের নল বাঁকাইয়া এবং দাঁতে চ্যাপ্টা করিয়া ফেলিয়াছিল।

 দুশেলু নামক এক সাহেব গরিলার কথা শুনিয়া তাহাকে দেখিবার জন্য আফ্রিকায় গিয়াছিলেন, তিনি প্রকাণ্ড এক গ্রন্থে তাঁহার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন। এই পুস্তকে অনেক আশ্চর্য আশ্চর্য গল্প লেখা আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তোমাদিগকে তাহার দুই-একটার অধিক উপহার দিতে সাহস পাইতেছি না। উইনউড্‌রীড নামক এক সাহেব দুশেলুর কিছু পরে আফ্রিকায় গিয়াছিলেন। দুশেলুর কথাগুলি কত দূর সত্য তাহা জানিবার জন্য তিনি বিস্তর অনুসন্ধান করেন। দুশেলুর পুস্তকে যে-সকল লোকের উল্লেখ আছে, তিনি তাহাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিয়া, তাহাদের সহিত এ সম্বন্ধে অনেক আলাপ করেন;তাহাতে তিনি জানিতে পারিয়াছে যে, দুশেলুর সকল কথা সম্পূর্ণ সত্য নহে। রীড সাহেব গরিলার সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছে তাহার কিয়দংশ অনুবাদ করিয়া তারপর গরিলা সম্বন্ধে দুই-একটি গল্প বলিয়া আমরা শেষ করিব।

 দুশেলু সাহেব নিম্নলিখিত গল্পটি বলিয়াছেন—আমরা একটা অন্ধকারময় উপত্যকার দিকে চলিলাম। গ্যাম্বো (দুশেলুর আফ্রিকা দেশীয় ভৃত্য) বলিয়াছিল, সেখানে শিকার (গরিলা) মিলিবে। আমাদের দলের লোকেরা পৃথক হইয়া চলিল। গ্যাম্বো আর আমি একত্র থাকিলাম। একজন সাহসী লোক একা একদিক-পানে চলিল, সে মনে করিয়াছিল সেই দিকে গেলে গরিলা পাওয়া যাইবে। অবশিষ্ট তিনজন অন্য-একদিকে চলিল। এইরূপে পৃথক হইয়া আমরা একঘণ্টা কাল ছিলাম, এমন সময়ে গ্যাম্বো আর আমি আমাদের অতি অল্প দূরে একটা বন্দুকের শব্দ শুনিলাম। তার পরক্ষণেই আর-একটা আওয়াজ হইল। আমরা অবিলম্বে সেই দিকে লক্ষ্য করিয়া চলিলাম;আমরা মনে করিয়াছিলাম যে, একটা মরা গরিলা দেখিতে পাইব। এই সময়ে ভয়ানক শব্দে বন প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। গ্যাম্বো অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া আমার বাহু ধরিল। আমরা খুব তাড়াতাড়ি চলিতে লাগিলাম, মনে অত্যন্ত ভয় হইতে লাগিল। বেশি দূর যাইতে না যাইতেই দেখিলাম, আমরা যাহা ভয় করিতেছিলাম তাহাই