হইল। সে দুধ ছাড়া আর কিছুই খাইতে পারিত না, আমিও দুধের জোগাড় করিতে পারিলাম না। সুতরাং দুইদিন পরে বেচারা মরিয়া গেল।” পশুদের প্রতি কি নির্দয় ব্যবহার! পাঠকপাঠিকা শুনিয়া হয়ত তোমাদের মনে ঘৃণা জন্মিবারই কথা।
মশা
আমরা ছেলেবেলায় মশার বাসা খুঁজিতে যাইতাম। টেকি গাছে মশা বাসা করে এই আমাদের বিশ্বাস ছিল। লাল রঙের একপ্রকার বড় পিঁপড়ে যেমন গাছের পাতা দিয়া বাসা প্রস্তুত করে, ঢেঁকি গাছে সেই রূপ অতি ক্ষুদ্র বাসা পাওয়া যায়। এগুলি কিসের বাসা তাহা আমি আজিও জানিতে পারি নাই, কিন্তু আমার ছেলেবেলায় এই সংস্কার ছিল যে, এগুলি মশার বাসা বই আর কিছুই নহে। বাস্তবিক এই সকল বাসার প্রায় প্রত্যেকটিতে এক-একটি করিয়া মশা পাওয়া যায়।
যে-সকল মশা আমাদের রক্ত খাইতে আইসে তাহারা সকলেই স্ত্রী-মশা। পুরুষ-মশা নিরীহ লোক; সে ফুলের মধু খাইয়া জীবন ধারণ করে। উহাদের স্ত্রী পুরুষের মুখের গঠনেরও কতকটা তফাত আছে।
ডিম পাড়িবার সময় হইলে স্ত্রী-মশা উপযুক্ত একটি জলাশয় খুঁজিয়া লয়। নির্জন পুকুরগুলি এই কার্যের পক্ষে অতি উৎকৃষ্ট স্থান। কিন্তু তিন-চারদিন ধরিয়া ঝি যে জলের হাঁড়ি ঘরের কোনে রাখিয়া দিয়াছে, তাহার খোঁজ পাইলেও মশার মা নিতান্ত দুঃখিত হইবে না। একেবারে অনেকগুলি ডিম পাড়া হইবে। পেছনের দুইখানি পায়ের সাহায্যে ডিমগুলিকে একত্র করিয়া একটি ক্ষুদ্র নৌকার আকারে সাজানো হইবে;এই নৌকাটি জলে ঘড়িয়া দিলেই সে ভাসিতে থাকিবে। ডিমের সরু দিকটা উপরে থাকে, সুতরাং কিরূপে নৌকার আকার হয় তাহা সহজেই বুঝা যাইতেছে। উপযুক্ত সময় হইলেই ডিম ফুটিয়া মশার ছানা বাহির হয়। এই সময়ে এগুলিকে দেখিলে কেহই মনে করিতে পারে না যে, ইহারাই কালে মশা হইয়া মানুষ খাইতে আসিবে। তোমরা নিশ্চয়ই গরমের দিনে স্থির জলে মশার ছানাগুলিকে তিড়িং তিড়িং করিয়া নাচিতে দেখিয়াছ কিন্তু তাহাদিগকে চিনিতে পার নাই। ডিম হইতে বাহির হইয়া ইহারা জলে খেলা করিতে থাকে। ঝি অনেক সময় না দেখিয়া খাবার জলের সহিত গেলাস করিয়া যে কতগুলি পোকা আনিয়া দেয় তাহা এই মশার ছনা। ইহাদের নিশ্বাস ফেলিবার যন্ত্র ল্যাজের কাছে। নিশ্বাস ফেলিবার সময় ল্যাজের অগ্রভাগটি জলের উপরে ভাসাইয়া দিয়া ঝুলিতে থাকে। চোয়ালে একপ্রকার লোম আছে, সেই লোমগুলি কেমন করিয়া যেন জলের উপর ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র আবর্ত প্রস্তুত করে। সেই আবর্তে ঘুরিয়া নানারকমের খাদ্যাখাদ্য আসিয়া মুখের ভিতর পড়ে। মশার ঘনা এই উপায়ে জীবন ধারণ করে।
তিনবার চর্ম পরিবর্তনের পর ইহার আর-এক প্রকারের আকার ধারণ করে, তাহাতে মশার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি মোটামুটি সকলই বর্তমান থাকে। কিছুকাল পরে পূর্ণাবয়ব মশা ইহার ভিতর হইতে বাহির হয়। খোলসটা জলের উপর ভাসিতে থাকে; মশা তাহারই উপর বসিয়া উড়িবার জন্য যথেষ্ট বল লাভের অপেক্ষা করে। অল্পক্ষণ রোদ বাতাস লাগিলেই
উপেন্দ্র-১০৬