তাহার হাত-পা শক্ত হয়। তখন সে শুন্যে উড়িয়া অপরাপর সঙ্গীদের সহিত খেলা করে।
মশাগুলি বড় লোভী। গায়ে বসিবামাত্রই যদি তাহাকে তাড়াইয়া না দেও তবে সে আস্তে আস্তে শুঁড়টি চামড়ার ভিতর ঢুকাইয়া দিবে। রক্ত খাইতে খাইতে সে এতই আরাম পায় যে শেষে আর তাহার বাহ্যজ্ঞান থাকে না-আমরা এত খাইলে বোধহয় খবরের কাগজওয়ালারা এতদিন আমাদের নাম ছাপিয়া দিত। যখন গায়ে বসে, তখন দেখিবে যে, তাহার শরীরটি ছুঁচের অগ্রভাগের ন্যায় সরু। ক্ষুধায় তাহার এই দশা হইয়াছে; কিন্তু কিছুকাল তাহাকে খাইতে দাও, দেখিবে শীঘ্রই সে ফুলিয়া উঠিবে, তাহার পেটটি লাল হইয়া আসিবে। এই সময়ে তাহার দুই পাশে আঙুল দিয়া চাপিয়া সেই স্থানের চামড়া টান করিয়া ধরিলেই সে আটকিয়া পড়ে। শুঁড়টি ঢুকাইবার জন্য যে ফুটো করিতে হইয়াছিল টান করিয়া ধরিলে সেই ফুটো সরু হইয়া যায়। সুতরাং শুঁড় আর বাহির হইতে পারে না। রাত্রিকালে মশারির ভিতরে দুই-একটি মশা জোগাড়যন্ত্র করিয়া প্রায়ই ঢুকিয়া যায়। সকালবেলা আর তাহারা উদর লইয়া চলিতে পারে না। এইরূপ অবস্থায় অনেক মশাকে ধরিয়া টিপিয়া মারা গিয়াছে।
একটি গল্প বলিয়া শেষ করিতেছি। গল্পটি বোধহয় সত্য নহে, কিন্তু ইহাতে মজা আছে। কতকগুলি আইরিস সাহেব একবার এদেশে আসিয়াছিলেন। তাঁহারা কখনো মশা দেখেন নাই, সুতরাং প্রথমে মশারি কিনেন নাই। রাত্রিতে শুইয়াই বুঝিতে পারিলেন যে এদেশের কাণ্ডকারখানা অন্যরকম। অনেক ধমকাইলেন, অনেকবার হত মুষ্টিবদ্ধ করিয়া ভয় দেখাইলেন, দাঁত খিচাইলেন কিন্তু মশারা কোনোমতেই ভয় পাইল না। অবশেষে লেপদ্বারা সর্বশরীর ঢাকিয়া কিয়ৎকালের জন্য নিরাপদ হইলেন। কিছুকাল পরে একজন লেপের এক কোণ সরাইয়া দেখিলেন যে ঘরের ভিতর একটা জোনাকী পোকা আসিয়াছে। দেখিয়াই তিনি চ্যাঁচাইয়া উঠিলেন, “ওরে আর রক্ষা নাই। লেপ মুড়ি দিয়া কি করিবে? ঐ দেখ জানোয়ারগুলি একটা লণ্ঠন লইয়া আমাদিগকে খুঁজিতে বাহির হইয়াছে!”
গ্লাটন্
গ্লাটন্ নামক জানোয়ারের বাড়ি আমাদের দেশে নয়। উত্তরের শীতপ্রধান দেশ-সকলে ইহারা বাস করে; কামস্কট্কা উপদ্বীপে ইহারা খুব বেশী পরিমাণে থাকে। ঐ-সকল শীতপ্রধান দেশে ভোঁদড় জাতীয় অনেক প্রকারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জন্তু বাস করে; তাহারা নিশাচর বৃত্তি করিয়া জীবন ধারণ করে। তাহাদের জ্বালায় সেখানকার লোকেরা সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকে। গৃহপালিত ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র আহারীয় পশুপক্ষীর প্রতি ইহাদের বড়ই অনুরাগ। এই কারণে ঐসকল দেশের অধিবাসীদিগের সহিত ইহাদের শত্রুতা চিরকাল চলিয়া আসিতেছে। তাহার উপর আবার এই-সকল পশুর চর্ম অতিশয় মূল্যবান। সুতরাং ইহাদিগকে বধ করিবার জন্য নানা প্রকার উপায় অবলম্বিত হয়। এরূপ লোক আছে যে, নানাপ্রকার কৌশল করিয়া ঐসকল জন্তু ধরাই তাহাদের ব্যবসায়। আমরা যে জন্তুর কথা কহিতেছি, সেও এই জাতীয়; কিন্তু তাহার স্বাভাবিক ধূর্ততা এত বেশি যে, তাহাকে কেহই ধরিতে পারে না।
গ্লাটনের সম্বন্ধে পূর্বকালে লোকের অনেক আশ্চর্য সংস্কার ছিল। তখনকার একটা