পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিতে হইলে ঠিক মানুষের বুদ্ধির সমান বুদ্ধির আবশ্যক করে। সুতরাং আমি আবার কল পাতিয়া রাখিলাম। দড়িটি যেখানে ছিঁড়িয়াছিল সেইখানে বাঁধিয়া দিলাম। কিন্তু ক্রমাগত তিনবার অবিকল একইরকম ফল পাইলাম। আরো আশ্চর্যের বিষয় এই যে দড়িটি যে জায়গায় বাঁধিয়া দেওয়া গিয়াছে প্রত্যেকবার তাহার একটু পেছনে কাটিয়াছে, কি জানি যদি ইহার মধ্যেও আমি তাহার বিনাশের জন্য কোনরূপ সন্ধান করিয়া রাখিয়া থাকি। এইসকল দেখিয়া আমি এই সিদ্ধান্ত করিলাম যে, এইরূপ বুদ্ধিমান জন্তুর বাঁচিয়া থাকাই উচিত।”


বিড়াল

 আগে ঠাকুরমার কাছে বিড়ালের সম্বন্ধে অনেক কথা শুনিয়াছিলাম;দুঃখের বিষয় তাহার সবগুলি এখন মনে হইতেছে না। আজ যদি সেই বৃদ্ধা বাঁচিয়া থাকিতেন, তবে তাঁহার কাছে আসিয়া বিড়াল সম্বন্ধে তোমাদের কত বৃহৎ কুসংস্কার দূর করিতে পারিতে। অতি শৈশবকালে, যখন প্রথম জানিতে পারিলাম যে আমার একজন ঠাকুরমা আছে, তখন হইতেই জানিয়াছিলাম যে তাঁহার একটি বিড়ালীও আছে। ঠাকুরমা বলিলেই আমার মনে হয়, এক বুড়ি দরজার ধারে কুশাসন বিছাইয়া নামাবলী মাথায় দিয়া জপ করিতেছে আর এক বিড়ালী তাঁহার অঞ্চলে গা ঢাকিয়া হাত-পা গুটাইয়া চক্ষু মুদিয়া ধ্যানে মগ্ন রহিয়াছে।

 ঠাকুরমা বিড়ালীকে আদর করিতেন, কিন্তু হুলো বেড়াল দুচক্ষে দেখিতে পারিতেন না। বিড়ালীর ছানাগুলি যখন হইত তখনই হুলোগুলিকে ধরিয়া থলের ভিতরে পুরিয়া গ্রামান্তরে নির্বাসিত করা হইত।

 কি করিয়া বাঘের মাসি বোন্‌পোয়ের সঙ্গে বিবাদ করিয়া, মানুষের বাড়িতে আসিয়া বিড়ালরূপ ছদ্মবেশ ধারণ করিল; তদবধি কি প্রকারে বাঘ তাহাকে শাস্তি দিবার জন্য ক্রমাগত খুঁজিয়া বেড়াইতেছে;এবং সেই ভয়ে বিড়াল কিপ্রকারে নিজ অস্তিত্বের চিহ্ন পর্যন্ত লোপ করিবার জন্য গর্ত খুঁড়িয়া মলত্যাগ করিয়া তাহা আবার যত্নপূর্বক মৃত্তিকা দ্বারা আচ্ছাদন করে; ইত্যাদি সকল কথাই ঠাকুরমা আমাদিগকে বলিয়া গিয়াছেন। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ এই-সকল বিষয়ে মাথা ঘুরাইয়া অদ্যাপিও কোনো মীমাংসায় আসিতে পারেন নাই। তাঁহারা যদি আমার ঠাকুরমার নাতি হইতেন, তাহা হইলে শৈশবকালেই এ-সকল প্রশ্নের অতি সন্তোষজনক উত্তর পাইতেন।

 বিড়াল মানুষের ঘরের জন্তু, মানুষ তাহার নিকটে অনেক উপকারও পাইয়া থাকে; কিন্তু তথাপি বেচারীকে কেন জানি না, কেহই দেখিতে পারে না। কুকুর ঐ বিষয়ে ভাগ্যবান। ঠাকুরমা বলিতেন-“কুকুরটির ইচ্ছা করে, বাড়ির কর্তার ছেলে হউক, তবেই তাহার খাবার সময় সে পেট ভরিয়া ভালো ভালো জিনিস খাইতে পাইবে। আর বেড়াল ইচ্ছা করেন গিন্নির চোখ কানা হউক, তবেই সে অলক্ষিতে মাছভাজা মুখে লইয়া চম্পট দিতে পারিবে।

 এদেশে যেমন, অন্যান্য দেশেও তেমনি কতকটা দেখা যায়। ইংলণ্ড প্রভৃতি দেশের অজ্ঞ লোকে বিড়ালকে ভূত-পেত্নীর চর বলিয়া মনে করিত। পূর্বে সেখানকার লোকের এবিষয়ে অনেক কুসংস্কার ছিল। জাদুকর শ্রীলোকদের প্রত্যেকে এক-একটি করিয়া বিড়াল থাকিত।