এরূপ গল্প আছে যে, একবার এই শ্রেণীর কতকগুলি স্ত্রীলোক একটা বিড়ালের নামকরণ করিয়া রাত্রিযোগে তাহাকে লীথ্ নগরের সামনে রাখিয়া আসিল। এরপর সেই নগরে এমন এক ঝড় হইল যে, তেমন ঝড় সেখানকার কেহ কখনো দেখে নাই। সাধারণ লোকের এইপ্রকার কুসংস্কার থাকাতে অনেক সময় অনেক ভয়ানক ঘটনা হইত। কোনো স্থানে হয়তো ক্রমাগত কতগুলি দুর্ঘটনা হইল; অমনি সকলে সিদ্ধান্ত করিয়া বসিল যে, নিশ্চয়ই কেহ জাদু করিয়াছে। গ্রামের এক কোণে এক গরিব বুড়ি বাস করে, সংসারে তাহার কেহ নাই। হয়তো তাহার মনটা একটু হিংসুকে; হয়তো গ্রামের একজন একদিন তাহাকে আপনমনে বকিতে দেখিয়াছে;আর একজন হয়তো বুড়িকে একদিন লাঠি হাতে করিয়া কাক তাড়াইতে দেখিয়াছে। গ্রামের লোকের বুড়ির উপর ভারি সন্দেহ হইতে লাগিল। এরপর যদি বুড়ির একটা কালো বিড়াল থাকে, তবেই সর্বনাশ! বুড়ি নিশ্চয়ই ডাইনী। এমন সময় গ্রামের একজন চাষার মনে হইল যে, একদিন তাহার গোরু বুড়ির শসা গাছ খাইয়া ফেলিয়াছিল, সেইজন্য গোরুকে বুড়ি “তোর মুনিব উচ্ছন্ন যাউক” বলিয়া গালি দিয়াছিল, তারপর হইতে সেই চাষার ক্ষেতে ইন্দুর আসিয়াছে। আর রক্ষা নাই—বুড়ি ডাইনী; বুড়ির বিচার হইবে।
বিচারটা আবার কিরূপ জান? বুড়ির হাত-পা বাঁধিয়া তাহাকে পুকুরে ফেলিয়া দেওয়া হইবে;ইহাতে যদি সে ডুবিয়া মরে তবে সে নির্দোষ, আর যদি তাহা না হয়, তবে সে দোষী, তাহাকে পোড়াইয়া ফেলা হইবে।
যাহা-হউক, আমরা বিড়ালের কথা ভুলিয়া যাইতেছি। আমি বলিতেছিলাম, বিড়ালকে কেহই দেখিতে পারে না। কিন্তু তাই বলিয়া বিড়ালের কোনো সদ্গুণ নাই, এমন কথা বলা উচিত নয়। প্রথমে দেখ, বিড়ালের যদি কোনো গুণই না থাকিবে তবে এত লোকে বিড়াল পোষে কেন? চেহারার জন্য? ঠিক তাহা নহে। ইঁদুর মারে বলিয়া? তাহাই বা কেমন করিয়া বলি। অনেক বড়লোক এক-একটা বিড়ালকে যারপরনাই ভালোবাসিয়া গিয়াছে। ইংলণ্ডের বিখ্যাত পণ্ডিত ডাক্তার জন্সনের ‘হজ’ নামে একটা বিড়াল ছিল। হজ জন্সনের বাড়িতে থাকিয়া ক্রমে বৃদ্ধ হইল, তাহার শেষকাল আসিল। এই সময়ে জন্সন্ হজের যেপ্রকার শুশ্রুষা করিতেন, অনেক বাপ ছেলের জন্য তেমন করে না। জন্সন্ স্বয়ং বাজারে গিয়া হজের আহারের জন্য ঝিনুক কিনিয়া আনিতেন।
ইটালীর একজন খুব বিখ্যাত পাদরির তিনটা এঙ্গোরা বিড়াল ছিল। খানার সময় টেবিলের পাশে পাদরি-সাহেবের জন্য যেমন চেয়ার দেওয়া হইত, তেমন বিড়ালগুলির জন্যও চেয়ার থাকিত। হাজার বড়লোক পাদরি সাহেবের সঙ্গে খানা খাইতে আসুন-না কেন, তাঁহাকেও সেই বিড়ালগুলির সঙ্গে এক টেবিলে বসিয়া খানা খাইতে হইত।
বিলাতের আর-একজন বড়লোকের কথা শুনিয়াছি। তিনি অবিবাহিত ছিলেন, একটা বিড়ালী বৈ তাঁহার আর সঙ্গী ছিল না। এই বিড়ালীও সাহেবের সঙ্গে এক টেবিলে বসিয়া খানা খাইত। এমন কি, একটা খাবার জিনিস আসিলে তাহার এক টুকরা আগে বিড়ালীর পাতে দেওয়া হইত, তারপর সাহেব অবশিষ্টটুকু আহার করিতেন। এই সাহেবের একজন বন্ধু একবার তাঁহার বাড়িতে অতিথি হইলেন। খানার সময় সাহেব মাংসের টুক্রা কাটিয়া প্রথমে বন্ধুর পাতে দিলেন। এই সম্মানটুকু এতদিন বিড়ালীর ছিল। আজ তাহার অন্যথা হওয়াতে সে এতঊর অপমানিত বোধ করিল যে, একলাফে টেবিলের উপরে উঠিয়া