পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সাহেবের নাক-মুখ আঁচড়াইয়া দিল। এই আঁচড়ের দাগ সাহেব এ জীবনে আর দূর করিতে পারিলেন না।

 তোমাদের অনেকই বিখ্যাত হুইটিংটন্‌ সাহেবের কথা পড়িয়াছ। হুইটিংটন্‌ বাল্যকালেই পথের ভিখারি হইয়াছিলেন। হুইটিংটনের অনেক সদ্‌গুণ ছিল, এবং একটি অতি প্রিয় বিড়ালও ছিল। এরূপ গল্প আছে এই-সকল সদ্‌গুণের জোরে এবং বিড়ালের বিশেষ সাহায্যে হুইটিংটন্‌ শেষে বড়লোক হইয়াছিলেন। হুইটিংটন্‌ এবং তাঁহার বিড়ালের গল্প অতিশয় আমোদজনক; এবং যদিও ইহার সমুদয় অংশ সত্য নহে, তথাপি ইহার ভিতরে সুন্দর উপদেশ আছে।

 এইসকল গল্প পড়িয়া তোমরা ইহাই বুঝিবে যে অনেক বড়লোক বিড়ালকে ভালোবাসিয়া গিয়াছেন। কিন্তু বিড়ালের যে বিশেষ কোনো সদ্‌গুণ আছে, এ-সকল হইতে তাহার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না। কিন্তু এরূপ প্রমাণেরও কোনো অভাব নাই। নিম্নে এ সম্বন্ধে দুই-তিনটি গল্প বলিয়া শেষ করিতেছি।

 কোনো ভদ্রলোকের বাড়িতে একটা বিড়ালী ছিল। বিড়ালীকে সকলেই বিশেষ ভালবাসিত। একদিন রাত্রিতে বৈঠকখানার ঘরে ঘণ্টার শব্দ শুনিয়া সকলেরই ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। বাড়িতে চোর ঢুকিয়াছে মনে করিয়া সকলেই সশস্ত্র হইয়া বৈঠকখানার দিকে ছুটিলেন। দেখা গেল যে, বৈঠকখানার দরজা যেরূপভাবে বাহিরের দিক হইতে অর্গল দিয়া রাখা হইয়াছিল ঠিক তেমনি আছে, কিন্তু ভিতর হইতে ঘণ্টার শব্দ আসিতেছে। দরজা খুলিয়া দেখা গেল যে, বিড়ালী চাকরদের ডাকিবার ঘণ্টার কাছে দাঁড়াইয়া ক্রমাগত তাহা নাড়িতেছে। ঘণ্টাটি এমন স্থানে ছিল যে তাহাকে বাজাইতে হইলে একটু কষ্ট স্বীকার করিতে হয়। সন্ধ্যার সময় বিড়ালী ঐ ঘরে অজ্ঞাত সারে আটকা পড়িয়াছিল। বাহির হইবার উপায়ান্তর না দেখিয়া অগত্যা সে এই কষ্টটুকু স্বীকার করিয়াছে। অন্যান্য দিন ঐ ঘণ্টা বাজিলেই ঘরে লোক আসে, তাহা সে দেখিয়াছে। সুতরাং সে চেয়ারের উপর উঠিয়া, পিছনের দুই পায়ে দাড়াইয়া, এক হাতে ঘণ্টা বাজাইতে আরম্ভ করিল। ইহার ফল কি হইল, প্রথমেই শুনিয়াছ। বিড়ালী যে কেবল ঐদিন এরূপ করিয়াছিল, তাহা নহে। যখনই ঘরে সে আট্‌কা পড়িত, তখনই ঐ উপায় অবলম্বন করিয়া বাহিরে আসিত।

 একবার এক বৃদ্ধা উইল করিয়া তাহার সমস্ত বিষয় তাহার ভ্রাতুষ্পুত্রকে দিল। ইহার কিছুদিন পরেই বৃদ্ধার মৃত্যু হইল। ভ্রাতুস্পুত্র উকিল, বৃদ্ধার অন্ত্যেষ্টির পরেই সে তাহার ঘরে আসিয়া তাহার উইল পড়িতে লাগিল। বৃদ্ধের একটি প্রিয় বিড়াল ছিল। এই বিড়াল, বৃদ্ধাকে এত ভালোবাসিত যে, একবারও তাহার কাছ-ছাড়া হইত না। এমন-কি, মৃত্যুর পরেও সেই মৃত শরীরে কাছে বসিয়া রহিল। বৃদ্ধার ভাইপো যখন বৃদ্ধার ঘরে বসিয়া উইল পড়িতেছিল, সেই সময়ে বিড়ালটি অত্যন্ত উৎকণ্ঠিতের ন্যায় সেই ঘরের দরজার বাহিরে ছুটাছুটি করিতেছিল। কিছুকাল পরে যেই দরজা খোলা হইল, অমনি বিড়াল ছুটিয়া আসিয়া উকিল ভাইপোর গলা কামড়াইয়া ধরিল—অনেক কষ্টে তাহাকে ছড়ানো হইল। এই ঘটনার আঠারো বৎসর পরে ভাইপোর মৃত্যু হইল। মৃত্যুশয্যায় সে স্বীকার করিল যে, বৃদ্ধার টাকাগুলি শীঘ্র শীঘ্র পাবার জন্য সে তাহাকে খুন করিয়াছিল।

 এক পরিবারে একটি অতি সুন্দর বিড়াল পালিত হইয়াছিল। সেই পরিবারের জ্যেষ্ঠ