দিয়া ঘোড়ার ন্যায় বুদ্ধিমান এবং বাধ্য জন্তুর মতন কাজ করাইয়া লওয়া) তেমন আশ্চর্য বিষয় বলিয়া মনে হয় না। অন্তত এ কাজে বিশেষ কোনো বিপদের আশংকা নাই।
কিন্তু একটা বাঘকে বন হইতে ধরিয়া আনিয়া তাহাকে আদবকায়দা শিখাইতে গেলে যে, ব্যাপারখানা কিরূপ দাঁড়ায়, তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে কাহাকেও পরামর্শ দিই না। যাঁহারা এ কাজ কখনো করিয়াছেন, তাঁহাদের মুখে শুনা যায় যে, ইহার মতো বিপদজনক কাজ অতি অল্পই আছে। এ কথা তাঁহারা বিশেষ করিয়া না বলিলেও আমরা সহজেই অনুমান করিয়া লইতে পারি।
এ-সকল জন্তুর মেজাজের উপরে কোনোরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা চলে না। নিতান্ত ভালোমানুষ সিংহটাও কখন যে হঠাৎ হাসি থামাইয়া তাহার গুরুর ঘাড় মটকাইয়া দিবে, তাহার কিছুই ঠিকানা নাই। বনের স্বাধীন সুখ ছাড়িয়া অবধি খাঁচার ভিতরে থাকিয়া সে যত অপমান সহ্য করিয়াছে, তাহা তাহার মনে চিরকাল থাকিয়া যায়, এবং কোন মুহূর্তে যে তাহার প্রতিশোধ লইবে, তাহা কেহই বলিতে পারে না।
কত অপমান? আচ্ছা মনে কর তো দেখি, কতখানি নাকাল হইলে তবে একটা মানুষের মাথা মুখের ভিতরে পাইয়াও বাঘের তাহা একটিবার চিবাইয়া দেখিতে ইচ্ছা করে না। প্রথম যখন সে বন হইতে আসিয়াছিল, তখন বুঝি তাহার মেজাজ এমনি ঠাণ্ডা ছিল! তখন তাহার স্বভাব কিরূপ ছিল, তাহা তাহার প্রথম কয়েকদিনের ব্যবহার হইতেই বুঝিতে পারা যায়। একটা ইংরাজি প্রবন্ধে এ সম্বন্ধে যাহা পড়িয়াছি, তাহা এইরূপ—
‘বাঘ সিংহকে পোষ মানান অনেক দিনের আর বড় বিপদের কাজ। কিন্তু তাহাকে প্রথম বাগ মানাইবার উপায়টি অতি সহজ এবং অদ্ভুত। জানোয়ারকে ধরিয়া আনা হইল। তাহার বাড়ি হইতে তাহাকে ছিনাইয়া লইয়া খাঁচার ভিতরে কয়েদ করা অবধি তাহার ভবিষ্যৎ প্রভুর নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত প্রত্যেক মুহূর্তে তাহার রাগ বাডিয়া আসিয়াছে, সে রাগ কাহারো উপরে একবার ঝাড়িতে পারিলে হয়, তাই সে কেহ খাঁচার নিকটে গেলেই দাঁত খিচাইয়া গর্জন করিতে থাকে। এ সময়ে তাহার শিক্ষক খাঁচার ভিতরে গেলে তাহাকে তখনই খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিবে।’
‘সিংহ হইলে, এই সময়ে তাহার রাগ থামাইবার জন্য তাহাকে বেশ করিয়া খাওয়ানো হয়, আর এমন একটা-কিছু তাহাকে দেওয়া হয়, যাহার উপরে সে রাগ ঝাড়িতে পারে। সে জিনিসটা আর কিছু নহে, একখানি সাধারণ চেয়ার।’
‘চেয়ারখানিকে খুব সাবধানে খাঁচায় ঢুকাইয়া দেয়, আর নিমেষের মধ্যে সিংহটা তাহার উপরে লাফাইয়া পড়ে। তার পরের মুহূর্তে আর সে চেয়ারের কিছু অবশিষ্ট থাকে না, খালি তাহার টুকরাগুলি চারিধারে ছড়ানো থাকে। পরদিন ঐরূপে আর-একখানি চেয়ার খরচ করা হয়। তৃতীয় দিন আর-একখানি। এইরূপ দিনের পর দিন চলিতে থাকে। শেষে সিংহের ইহাই বিশ্বাস হয়, যে ঐ চেয়ারের আর শেষ নাই। কাজেই তাহার উৎসাহ কমিয়া যায়। সে মনে করে, যে এইরূপ বৃথা পরিশ্রম করিয়া লাভ কি? না হয়, এ বিষয়ের তর্ক ছাড়িয়াই দিলাম। সুতরাং শিক্ষকের এইটুকু লাভ।’
‘ইহার পর একদিন কৌশলে তাহাকে ঘুমের ঔষধ গিলাইয়া দেওয়া হয়, আর ঘুম আসিলে সেই অবস্থায় তাহাকে বেশ করিয়া মজবুত শিকল দিয়া খাঁচার শিকের সহিত বাঁধা