হয়। ঘুম হইতে উঠিয়া সে দেখে, যে তাহার মাস্টার খাঁচার ভিতরে চেয়ারে বসিয়া আছে।
সিংহটা গর্জন করিয়া তাহাকে ধরিবার জন্য লাফ দেয়, কিন্তু শিকলির টানে তাহা করিতে পারে না, বরং তাহার নিজেরই দম আটকাইয়া যায়। এইরূপ আট দিন চলে। মানুষকে ধরিবার বিফল চেষ্টায় সিংহের বলক্ষয় হয়, আর মানুষটা সিংহের আস্ফালন গ্রাহ্য না করিয়া স্থিরভাবে বসিয়া থাকে। কাজেই শেষটা সিংহকেই হার মানিতে হয়।
ইহার পরে সিংহের শিকল খুলিয়া দিয়া খাঁচায় প্রবেশ করিতে হয়। ইহাই সর্বাপেক্ষা সংকটের সময়, ইহাতে প্রাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সিংহ প্রায়ই এই সময় তাহার শিক্ষকের প্রাণবধ করিতে চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষকও অবশ্য তখন চুপ করিয়া বসিয়া থাকে না। পূর্বের অভিজ্ঞতা দ্বারা সে অনেকটা বুঝিয়া লইয়াছে যে, এইরূপ স্থলে কিরূপ বিপদের সম্ভানা। সুতরাং সে তাহার জন্য প্রস্তুত হইয়াই আসিয়াছে। গলায় পুরু চামড়ার গলাবন্ধ, শরীরে খরের বর্ম। (খড়ের মধ্যে সহজে নখ বসে না, পিছলাইয়া যায়)। জন্তুটা বেশি মারাত্মক স্বভাবের হইলে শিক্ষক নিজের মাথাটাকে একটা লোহার খাঁচার মতন আবরণের দ্বারা সুরক্ষিত করে।
এক হাতে একটা মজবুত ত্রিশূলের মতন জিনিস আর-এক হাতে সেই চেয়ার। এবারে চেয়ার ঢালের কাজ করিবে। সিংহ লাফাইয়া খাইতে আসিবে ঐ চেয়ার দিয়া তাহার মাথাটাকে চাপিয়া ধরিতে হয়, আর সেই সময়ে কোনো কোমল স্থানে ত্রিশূলের খোঁচা লাগাইতে হয়। সিংহ খালি হওয়ায় থাবা মারিয়াই ফিরিয়া গিয়া আবার লাফাইবার জন্য প্রস্তুত হয়। শিক্ষক গলদ্ঘর্ম হইলেও কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া ত্রিশূলের গোডা দিয়া সিংহের নাকে মারে, ঐখানটায় সিংয়ে বড় লাগে। তাহাতে বেদনায় আর্তনাদ করিয়া সিংহ আবার হটিয়া যায়।
এইরূপে ক্রমাগত কয়েকদিন করিতে পারিলে শেষে সে জানোয়ারকে হার মানিতেই হয়। তাহার পর আর সে তাহাকে মারিতে চেষ্টা করে না, কিন্তু চিরদিনই তাহাকে বিষ নজরে দেখে।
একজন প্রসিদ্ধ জানোয়ার-ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল যে, বনের জন্তুকে ধরিয়া আনিয়া তাহাকে রাজি করিতে শিখাইতে তাহার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ কর কিনা? তিনি তাহার উত্তরে বলিয়াছিলেন, ‘তাহা তো নয়ই, বরং ইহাতে তাহাদের বেশ আমোদ হয়, আর শরীরও ভালো থাকে।’ কিন্তু উপরের বর্ণনায় সিংহের আমোদ কোন্খানটায় তাহা তো বুঝিলাম না।
আমাদের চাইতে ভয়ের কথাই অধিক সঙ্গত বলিয়া বোধ হয়। বেড়া ডিঙ্গানো শিখাইবার সময় প্রথমে জ্বলন্ত লোহা দিয়া বেচারার পিছনে ‘ছ্যাকা’ লাগাইয়া দেয়। তাহার পর জ্বলন্ত লোহার পরিবর্তে কোনো-একটা উজ্জ্বল পদার্থ দেখিলেই তাহার ভয়ে সে বেড়া ডিঙ্গায়। শিক্ষকের হাতের ছড়ির আগায় কোনো-একটা উজ্জ্বল পদার্থ এমন-কি, সাদা পালক বাঁধিয়া দিলেই সিংহের ‘ছ্যাঁকা’ লাগার কথা মনে হয়। ইহার মধ্যেও আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।
অনেক স্থলে কোনো-একটা কঠিন কাজ শিখাইতে হইলে আগে জানোয়ারটাকে ঘুমের ঔষধ দিয়া তাহার হাত-পা বাঁধা হয়। তাহার পর সেই বাঁধা অবস্থায় বলপূর্বক দড়ির আর কপিকলের সাহায্যে তাহাকে শিক্ষকের ইচ্ছানুরূপ করিয়া হাত-পা নাড়িতে বাধ্য করে। শেষে দড়ি খুলিয়া লইলেও সে ঐরূপ করিয়া হাত-পা নাড়িতে পারে, এই উপায়ে গোলার