উপর চড়া ট্রাইসিকলে চালানো প্রভৃতি শিখানো হয়।
আমাদের কথা না বলিলেই ভালো ছিল। অন্তত সিংহ বাঘ প্রভৃতির পক্ষে এ কথা খাটে না। তবে ভালুকগুলি নাকি এ-সব তামাশা করিতে অনেক সময় আমোদ পায়। তাহা হইতে পারে, কিন্তু সে কি এমন আমোদ, যে তাহাতে তাহার কারাবাসের দুঃখ কিছুমাত্র কমে? তাহা যদি হইত, তবে শিক্ষকের উপরে তাহাদের এত রাগ হইত বলিয়া বোধ হয় না। শিক্ষক তাহাদের ভালোবাসা আকর্ষণ করিবার জন্য নানারূপ উপায় অবলম্বন করে। নিজের হাতে সর্বদা জন্তুকে খাওয়ায়। তথাপি এমন তো শুনিতে পাই না যে, এ-সকল শিক্ষকের একজনকেও তাহার জানোয়ারগুলি বড় ভালোবাসে। বাঘ সিংহকে যাহারা খাওয়ায় তাহাদের প্রতি সেই-সকল জন্তুর ভালোবাসা হওয়ার কথা অনেক শুনিয়াছি। কিন্তু এই সকল শিক্ষকের জন্য এরূপ ভালোবাসা কেন হয় না? ভালোবাসা হওয়া দুরে থাকুক, বরং এরূপই শুনিতে পাই যে, ইহারা শিক্ষকের ঘাড় ভাঙ্গিবার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এ সম্বন্ধে উপরের উল্লিখিত ইংরাজি প্রবন্ধে এইরূপ মন্তব্য আছে।
‘মানুষ বনের জন্তুকে পোষ মানায় আর তাহার সহিত যথেচ্ছ ব্যবহার করে, এ কথা সত্য। কিন্তু সমুদ্র যেমন ঝড়ে মাতিয়া তাহার কর আদায় করে (অর্থাৎ অনেক মানুষের প্রাণ সংহার করে), সেইরূপ সিংহ ব্যাঘ্র অথবা অপর হিংস্র জন্তুরাও তাহাদের অপহৃত স্বাধীনতার এবং যে অপমান তাহারা ক্রমাগত সহিয়া আর সহিতে পারে নাই, তাহার মূল্যের দাবি করে এবং তাহা আদায়ও করিয়া থাকে। উত্তেজক আমোদর ব্যবস্থা করিতে গিয়া যে-সকল লোক হত আহত হইয়াছে, তাহার তালিকা দীর্ঘই হইবে।
এই-সকল জন্তুকে শিখাইবার সময় কোনোরূপ অনাবশ্যক নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু বাধ্য হইয়া যেটুকু ক্লেশ দেওয়া হয়, তাহার জন্যই তাহারা অসন্তুষ্ট থাকে। ইহার অতিরিক্ত কর্কশ ব্যবহার করিলে উহারা একেবারেই সহ্য করিতে পারে না। অত্যাচারের সময় কিছু না বলিলেও তাহা মনে করিয়া রাখে এবং সুযোগ পাইলে প্রতিশোধ লয়।
একটা হাতিকে একজন শিক্ষক অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে অঙ্কুশের খোঁচা মারিয়াছিল। হাতিটা তখন তাহাকে কিছুই বলিল না। পরদিন শিক্ষকটি ছয় সপ্তাহের ছুটি লইয়া চলিয়া গেল। ছুটির পরে ফিরিয়া আসিয়া সে যেই হাতিগুলির কাছে গিয়াছে, অমনি সেই হাতিটা হুঙ্কার করিয়া তাহাকে আক্রমণ করিল। শুঁড় দিয়া তাহার কোমর জড়াইয়া ধরিয়া নিকটবর্তী মাঠে একটা পুকুরের দিকে গেল। সেখানে গিয়া মাষ্টারমহাশয়কে ক্রমাগত তিনবার যথোচিত গাম্ভীর্যের সহিত জলে ছোপাইয়া আবার তাহাকে সার্কাসে লইয়া আসিল। সেখানে আসিয়া একরাশ করাতের গুড়ার মধ্যে তাঁহাকে খানিক গড়াইয়া লইয়া, নিজের জায়গায় গিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। হাতি অতিশয় মহানুভব জন্তু, তাই শিক্ষকমহাশয়কে যৎকিঞ্চিৎ শিক্ষা দিয়াই ছাড়িয়াছিল। বাঘ কিম্বা সিংহ হইলে সে যাত্রা তাহার প্রাণ থাকিত কি না সন্দেহ।
সিংহের চাইতে বাঘ আবার আরো বেশি হিংস্র। সিংহের কতকটা মহত্ব আছে, সদয় ব্যবহার করিলে তাহার একেবারে ভুলিয়া যায় না। কিন্তু বাঘের কাছে নাকি ভদ্রতার কোনোরূপ মূল্য নাই। সিংহীগুলির মন নাকি অনেকটা ভালো। একবার একটা সিংহ তাহার শিক্ষককে (শিক্ষয়িত্রী) আক্রমণ করিয়াছিল, এমন সময় একটা সিংহী আসিয়া সিংহটার ঘাড়ে পড়িয়া শিক্ষককে বাঁচাইয়া দিল।