পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৫৩

 সার্কাসওয়ালা বলিল ‘আচ্ছা তবে যাও। আমরা সেখানে থাকিব। আশা করি, কিছু হইবে না। মনে রাখিও, তিন মিনিটের বেশি বক্তৃতা করিতে পাইবে না। আর দোহাই, অঙ্গভঙ্গি করিও না!'

 সে রাত্রিতে অসম্ভব লোক হইল। পাদ্রি বেচারা শুষ্ক মুখে খাঁচায় প্রবেশ করিবার জন্য প্রস্তুত। হয়তো তখন তাহার ভয় হইয়াছিল, কিন্তু আর ফিরিবার সময় নাই। প্রকাণ্ড খাঁচা, তাহাতে দুটা বাঘ, তিনটা সিংহ আর তাহাদের ‘শিক্ষয়িত্রী’ ছিলেন। বক্তৃতা আরম্ভ হইল। প্রথমে গলার আওয়াজ একটু কাঁপিতে ছিল। জন্তুগুলি শান্তভাবে শুনিয়া যাইতেছিল। ইহাতে সাহস বাড়িয়াই হউক বা অন্য কোনো কারণেই হউক, পাদ্রি বেচারা সুর চড়াইয়া হাত ছুঁড়িতে লাগিল। সেই মুহূর্তেই বাঘিনীটা তাহার উপরে লাফাইয়া পড়িল। তাহাকে সাহায্য করিবার সময় পর্যন্ত পাওয়া গেল না। অনেক কষ্টে বাঘ তাড়াইয়া দেখা গেল, যে পাদ্রির তাহার পূর্বেই প্রাণ বাহির হইয়া গিয়াছে। বাঘিনী আক্রমণ করিবার সময় সামান্য একটু চকিত চিৎকার ভিন্ন বেচারা আর একটি শব্দ করিবারও অবসর পায় নাই।

 কেবল জানোয়ারের খাঁচার ভিতর গেলেই যে বিপদ, তাহা নহে, আরো বিপদের কারণ আছে। অনেক সময় জানোয়ারগুলি খাঁচা ভাঙ্গিয়া বাহির হইয়া পড়ে। তখন তাহারা কাহার প্রাণ নাশ করে, তাহার ঠিক নাই। এক বার একজন সহকারীর অসতর্কতায় দরজা খোলা পাইয়া এক সার্কাস হইতে একটা হাতি, তিনটা বাঘ, দুটো সিংহ আর দুটো মার্কিন ভল্লুক বাহির হইয়া পড়িয়াছিল। সার্কাসের লোকদের কিরূপ আতঙ্ক হইয়াছিল, বুঝিতেই পার। আর শহরের লোকদের আতংকের কথা না বলিলেও চলে! তাহারা ঘরে দরজা আঁটিয়া ছাতে উঠিয়া তথাপি নিশ্চিন্ত নহে। সার্কাসের লোকেরা অবশ্য অস্ত্রশস্ত্র লইয়া প্রাণপণে ছুটিয়া তখন সেখানে উপস্থিত হইল। কিন্তু ইহারই মধ্যে একটা ভালুক একটা মানুষ মারিয়া ফেলিয়াছে। একটা বাঘ একটি ছোট ছেলেকে মুখে করিয়া লইয়া আবার কি মনে করিয়া তাহাকে রাখিয়া দিল। সেই অবসরে সার্কাসের একজন লোক গুলি করিয়া বাঘটাকে মারিয়া ফেলিল। আশ্চর্যের বিষয়, ছেলেটির গায়ে একটি আঁচড়ও লাগে নাই। হাতিটা ইতিমধ্যে এক খেলনার দোকানে ঢুকিয়া অনেক খেলনাই পরীক্ষা করিয়াছে, কিন্তু বাহির হইবার পথ পাইতেছে না। আর অবশেষে বাঘ আর সিংহগুলি এক কসাইর দোকান পাইয়া এতই মোহিত হইয়াছে যে, তাহাদিগকে সেখানে আটকাইতে কোনো মুশকিল হইল না।

 জিজ্ঞাসা করিতে পার যে, এত বিপদ সহ্য করিয়া লোকে এ কাজ করিতে যায় কেন? এ কথার উত্তরে তাহার বলে যে, এ কাজ তাহাদের এতই ভালো লাগে যে, বিপদ-সত্ত্বেও তাহারা ইহা না করিয়া পারে না। একজন জানোয়ার শিক্ষক তাহার পুত্রকে ধর্মযাজক করিবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছিল, আর মনে একরকম নিশ্চিন্ত ছিল যে ছেলে বড় হইলেই পাদ্রি হইবে। ইহার মধ্যে একদিন দেখে যে সেই ছেলে জানোয়ারের খাঁচায় ঢুকিয়া আছে। ভয়ে বেচারার প্রাণ উড়িয়া গেল, সে ছেলেকে বলিল, ‘বাবা যদি প্রাণ নিয়ে বাহিরে আসিতে পার, এমন ঠেঙ্গানি দিব, যে জন্মে তেমন ঠেঙ্গানি খাও নাই।’ কিন্তু ছেলে বাহিরে আসিলে তাহাকে আর কিছু বলিল না। সুতরাং সে ছেলেও কালে জানোয়ারের ব্যবসায়ই অবলম্বন করিল।

 কিন্তু এই ব্যবসায় যাহারা সৃষ্টি করিয়াছিল তাহাদের অন্য কারণও ছিল দেখা যায়। মার্টিন