নামক এক ব্যক্তি এই ব্যবসায়ের পথপ্রদর্শকদিগের মধ্যে একজন। সে যে কারণে ইহাতে হাত দিয়াছিল, তাহা এই — মার্টিন সহিসের কাজ করিত, এক সার্কাসওয়ালার ভগ্নীর প্রতি তাহার ভালোবাসা জন্মিল। কিন্তু সার্কাসওয়ালা সহিসের কাছে ভগ্নীর বিবাহ দিতে রাজি হইল না। মাটিন কিন্তু নিরাশ না হইয়া ইহার এক উপায় স্থির করিল। দিন কয়েক পরে সে সার্কাসওয়ালাকে এক বাঘের খাঁচার ভিতরে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে নিমন্ত্রণ করিল। সার্কাসওয়ালা মনে করিল, বেচারা পাগল হইয়াছে। কিন্তু গিয়া দেখিল, যে মাটিন সহাস্যবদনে সেখানে বসিয়া আছে, আর বাঘ অতিশয় স্নেহের সহিত তাহার হাত চাটিতেছে। এই এক ঘটনাতেই মার্টিনের মনুষ্যত্ব এবং ভবিষ্যৎ উন্নতির লক্ষ্মণ দেখিয়া সার্কাসওয়ালা আর তাহার ভগ্নীকে তাহার সহিত বিবাহ দিতে আপত্তি করিল না।
মাছরাঙ্গার স্কুল
আমার তাঁবুর কাছে একটি ছোট নদী ছিল। ঐ নদীতে অনেক ছোট ছোট মাছ থাকিত। একদিন সকালে আমি নদীর ধারে গাছের নীচে বসিয়া আছি, এমন সময়ে একটি মাছরাঙ্গা উড়িয়া আসিয়া নদীর অন্য পারের মাটির ভিতর কোথায় ঢুকিয়া গেল। সেখানে মাটির নীচে একটা গাছের শিকড়ের আড়ালে লুকান, তাহার বাসা। আমি অনেক দিন মাছ ধরিয়াছি, চারিদিকে অনেক মাছরাঙ্গাও দেখিয়াছি, কিন্তু এতদিন তাহার বাসাটি দেখিতে পাই নাই। আমি যখনি যাইতাম, মাছরাঙ্গাগুলি খুব গোলমাল করিয়া নদীর উপরে উড়িয়া বেড়াইত, বোধহয়, তাহার আমাকে বুঝাইতে চাহিত, যে তাহাদের বাসা উপরের দিকে কোথাও হইবে।
ইহার পর হইতে মাছ ধরিবার সময়ে আমি ঐ বাসাটাকে খুব লক্ষ্য করিয়া দেখিতাম এবং এইরকমে মাছরাঙ্গাদের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য নুতন বিষয় জানিয়াছিলাম। এক মাছরাঙ্গা কখনো অপরের জলে মাছ ধরিতে যায় না, আর অপরকেও নিজের জলে আসতে দেয় না। পরিষ্কারই হউক, আর ময়লাই হউক, নদীর কোনখানে বেশি মাছ আর কোনখানে কম মাছ, তাহা তাহারা সকল সময়েই বুঝিতে পারে, আর ঢেউ-এর অনেক নীচ দিয়া মাছ দৌড়িয়া গেলেও তাহারা ধরিতে পারে।
এতদিনে আমার চেনা মাছরাঙ্গার ছানাগুলি একটু বড় হইয়াছে। একদিন সকালে একটা ঝোপের আড়ালে বসিয়া মাছরাঙ্গার গর্ত দেখিতেছি, এমন সময়ে ছানাদের মা তাহার ভিতর হইতে উঁকি মারিয়া চারিদিকে তাকাইতে লাগিল। নদীর ধারে একটা জলো সাপ শুইয়াছিল, মাছরাঙ্গী এক লাফে তাহার উপর গিয়া পড়িল, সে তো ভয়ে দৌড়। কিছুদূরে অল্প জলে কতকগুলি হাঁসের ছানা কোলাহলপূর্বক খেলা করিতেছে, তাহার ভালোমানুষ কাহকেও কিছু বলে না, তবুও মাছরাঙ্গী ছুটিয়া গিয়া বকিয়া ধমকিয়া তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিল। পথের মাঝখানে এক বেচারী ব্যাঙ বোদ পোহাইতেছে, তাহারও ঘাড়ে পড়িয়া মাছরাঙ্গী তাহাকে না তাড়াইয়া ছড়িল না। তখন সে আবার চারিদিক দেখিয়া, আর যদি কেহ লুকাইয়া থাকে, তাহকে ভয় দেখাইবার জন্য খুব জোরে একবার শব্দ করিয়া দৌড়িয়া গর্তে ঢুকিল।