পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৫৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ও লেজ উপরের দিকে করিয়া টুপ্‌ করিয়া জলে পড়ে, আর মাছ ধরে।

 নদীতে খুব স্রোত, সেখানে মাছ ধরা শক্ত, আর যেখানে কম জল, সেখানে মাছও কম। সেইজন্য মাছরাঙ্গা বুদ্ধি করিয়া এই জলটুকু বাহির করিয়াছে, আর নিজে মাছ আনিয়া তাহাতে ছাড়িয়াছে। প্রথম শিখিবার সময়ে মরা মাছ ছিল, কিন্তু এবারের মাছ জীয়ন্ত। তাহাদের নদীতে পলাইবার পথ নাই, চারিদিক বন্ধ। কাজেই বাচ্চাদের মাছ ধরিবার সুবিধা, কারণ যত ইচ্ছা সময় লইতে পারে।

 ইহার পর আবার যখন এই মাছরাঙ্গা পরিবারের সহিত আমার দেখা হইল, তখন তাহারা সকলেই খুব মাছ ধরিতে শিখিয়াছে। এখন আর আহত করা কিম্বা কয়েদ করা মাছের দরকার হয় না। তাহারা সকলেই খেলা করিয়া বেড়াইতেছে। একদিন তাহাদের এক চমৎকার খেলা দেখিলাম। আমি আগে আর কখনো মাছরাঙ্গার খেলা দেখি নাই।

 জলের উপর তিনটা ডালে তিনটি মাছরাঙ্গা বসিয়াছে। হঠাৎ ঠিক একসঙ্গে ঠোঁট নীচু করিয়া তিনজনেই ডুব দিল, আর তখনই উঠিয়া নিজের নিজের জায়গায় গিয়া বসিল। প্রত্যেকের মুখে এক-একটি মাছ। সেই মাছ গিলিবার জন্য তাহারা বেজায় ব্যস্ত হইয়া পড়িল, কাহারো বিষম খাইবার জোগাড়! এই খেলার উদ্দেশ্য, কে আগে ডুব দিয়া মাছ আনিয়া গিলিতে পারে। যে একবারে মাছ পায় না সে বেচারী মুখ ভার করিয়া নিজের ডালে গিয়া বসে। খেলা শেষ হইলে সকলে মিলিয়া নাচে, আর তাহাদের নিজের ভাষায় গান করে। ইহাদের জীবনের কাজই কেবল খাওয়া আর আনন্দ করা।


সুন্দরবনের জানোয়ার

 কয়েকটি সাহেব জাহাজে করিয়া সুন্দরবন দেখিতে গিয়াছে। জাহাজ-খানি রায়মঙ্গল নদীতে নঙ্গর করিয়াছে, সাহেবরা একটি ছোট্ট স্টীম বোটে করিয়া একটা খালে ঢুকিয়াছেন। প্রায় সমস্ত দিন নালায় নালায় ঘুরিয়া বিকাল বেলায় একটি ছোট নদীতে আসিয়া তাঁহাদের বোট থামিল।

 নদীর অপর পারে কয়েকটি শুয়োরছানা তাহাদের মায়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটি খুঁড়িয়া বেড়াইতেছে। জলে অনেকগুলি কুমির নাক জাগাইয়া রহিয়াছে।

 হঠাৎ একটা বাঘ ঝোপের ভিতর হইতে লাফ দিয়া আসিয়া একটি শুয়োরছানাকে ধরিয়া লইয়া গেল, তাহাতে আর শুয়োরগুলি চ্যাঁচাইয়া আকাশ ফাটাইয়া দিতে লাগিল। তাহার পরের মুহূর্তেই তাহাদের বাপ বিশাল এক বরা বন হইতে আসিয়া বাঘের সামনে দাঁড়াইয়াছে। বাঘও তখন শুয়োরছানাটিকে রাখিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইল। খানিক দুজনেই দুজনের দিকে তাকাইয়া আছে, কেহ কিছু বলে না। তারপর বাঘ ঘন ঘন লেজ নাড়িতে নাড়িতে গর্জন করিয়া উঠিল, বরাও রাগে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করিয়া তাহার উত্তর দিল।

 বাঘের চেষ্টা সে তাহার পিছনে গিয়া তাহার ঘাড়ে লাফাইয়া পড়িবে, কিন্তু বরা তা করিতে দিবে কেন? বাঘ যতই বরার পিছনের দিকে ঘুরিয়া যাইতে চাহে, বরা ততই তাহার দিকে ফিরিয়া দাঁড়ায়। এমনি করিয়া ঘুরিতে ঘুরিতে যেই দুজনে কাছাকাছি হইয়াছে, অমনি