পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৬১

দেন। তাহার কয়েকদিন পরে ডাক্তার দেখিলেন যে সেই কুকুরটা আর একটা খোঁড়া কুকুর আনিয়া তাঁহার কাছে উপস্থিত করিয়াছে।

 একটা বাঘের কথা পড়িয়াছিলাম, সে মানুষ খাইতে বড় ভালোবাসিত। সে গোরু খাইত না, কিন্তু গোরুর দড়ি ধরিয়া টানিয়া তাহাকে বনের কাছে নিয়া আটকাইয়া রাখিত। তারপর সেই গোরু খুঁজিতে খুঁজিতে মানুষ গিয়া সেইখানে উপস্থিত হইলে আর তাহাকে ধরিয়া খাইতে বেশি মুস্কিল হইত না।

 স্যাণ্ডার্সন নামে এক সাহেব লিখিয়াছেন যে একবার তাঁহাদের ছাউনি হইতে ক্রমাগত চাউল চুরি হইতে আরম্ভ হয়। চাকরেরা চাউলের বস্তা মাথায় দিয়া ঘুমাইয়া থাকে, তাহাদের মাথার নিচ হইতে কে সেই চাউল চুরি করিয়া লইয়া যায়, তাহারা তাহা টের পায় না। শেষটা চোর ধরিবার জন্য সাহেব নিজেই রাত জাগিয়া পাহারা দিতে লাগিলেন। তখন দেখিলেন যে তাহাদের সর্যূ নামে একটা হাতি ছিল, সেইটা অনেক রাত্রে আসিয়াছে। একজন লোক চাউলের বস্তা মাথায় রাখিয়া ঘুমাইতেছে সর্যূ আসিয়া প্রথমে শুঁড় দিয়া ভারি যত্বের সহিত তাহার মাথাটি আলগোছা ধরিল। তারপর চাউলের বস্তাটি আস্তে আস্তে সরাইয়া নিজের একখানি পা লোকটির মাথার নিচে রাখিয়া দিল। লোকটি ইহার কিছুই টের পায় নাই, সে নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছে, আর সেই অবসরে সর্যূ চাউল শেষ করিয়া বস্তাটি পুঁটুলি পাকাইয়া আবার তাহার মাথার নিচে রাখিয়া দিয়াছে সাহেব এতক্ষণ তামাশা দেখিতেছিলেন, হাতির বুদ্ধিতে সন্তুষ্ট হইয়া আর তাহার খাওয়ার বাধা দেন নাই। খাওয়া শেষ হইলে তিনি ডাকিলেন সর্যূ! আমনি সর্যূ সেখান হইতে দে ছুট!

 বিলাতে এক সাহেবের প্রকাণ্ড এক বানর ছিল, সে তাঁহার খোকাটিকে বড় ভালোবাসিত। একদিন সাহেবের বাড়িতে আগুন লাগিল। সকলেই সেই আগুন নিবাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। এদিকে খোকা যে উপরে রহিয়াছে আর সিঁড়িতে আগুন ধরিয়া গিয়াছে কাহারও সে হুঁস নাই। খোকার কথা মনে হইলে সকলে কপাল চাপড়াইতে লাগিল—হায় হায়! এখন উপায় কি হইবে, আর তো উপরে যাইবার সাধ্য নাই। এমন সময় দেখা গেল, বানরটা খোকাকে লইয়া জানালা দিয়া বাহির হইতেছে। তারপর সে খোকাকে সুদ্ধ ধীরে ধীরে নিচে নামিয়া আসল, বিপদও কাটিয়া গেল! তখন হইতে সেই বানরের কি রকম আদর হইয়াছিল, তাহা বুঝিতেই পার।

 শিয়ালের বুদ্ধির কথা আর কি বলিব, তোমরা সকলেই তাহা জান, অনেক সময় বেগতিক দেখিলে শিয়াল মুখ সিঁটকাইয়া মরিয়া থাকে। মরা শিয়াল মনে করিয়া কেহ তাহাকে কিছু বলে না। তারপর মুস্কিল চলিয়া গেলে সে আস্তে আস্তে উঠিয়া ঘরে যায়।

 কুকুরের ছানা হইলে দুটা শিয়াল মিলিয়া দু-দিক হইতে তাহাকে ভ্যাঙচাইতে আসে। কুকুরটা তাহাতে ভারি চটিয়া যেই একটাকে তাড়া করে, অমনি অপরটা ছানা লইয়া ছুট দেয়।


তিমিঙ্গিল

 তিমিকে যে গিলে, সে তিমিঙ্গিল। আমাদের দেশের পুরাতন পণ্ডিতেরা বলিয়াছেন, যে “তিমি মাছ একশত যোজন (৮০০ মাইল) লম্বা; তিমিঙ্গিল সেই তিমিকে গিলে। তিমিঙ্গি