থাকতে হয়। গিন্নীর মরজি হলে হয়তো বা এক-আধবার কর্তার একটু খাতির করেন। কিন্তু তারপরে হয়তো দেখা যায় যে তিনি তাকে চিবিয়ে খেয়ে মুখ হাত ধুয়ে দিব্যি হাসিমুখে বসে পান চিবোচ্ছেন।
আমার একটু ভুল হল। মাকড়সা চিবিয়ে খায় না, তারা শুধু চুষে রস খায়। ওদের ঐসব ধারালো দাঁত শুধু শিকারকে ধরে রাখার আর মারবার জন্য, তাতে খাবার কোনো সাহায্য হয় না। জিভ আছে, ঠোঁট আছে, তা দিয়ে রস চুষে খাওয়ার বেশ সুবিধা হয়।
ছেলেবেলায় মাকড়সার হেঁয়ালী শোনা যেত, তাতে আছে, ‘ছয় পা আঠারো হাঁটু।’ মাকড়সার যে আটটা পা, তা তোমরা গুনে দেখলেই বুঝবে। যে ঐ হেঁয়ালীটী তয়ের করেছিল, সে হয়তো ছয় পা-ওয়ালা একটা মাকড়সা দেখেই করে থাকবে— সে মাকড়সার দুটো পা কোন কারণে ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেই লোকটি মাসখানেক বাদে আবার যদি সেই মাকড়সাটাকে দেখত, তবে দেখতে পেত সে তার সেই দুটো পা আবার গজিয়েছে। মাকড়সাদের পা ছিঁড়ে গেলে আবার পা হয়। আমার কিন্তু খুব সন্দেহ হয় যে সেই হেঁয়ালীওয়ালা কখনো মাকড়সা ভালো করে দেখেনি; যদি দেখত তবে আঠারো হাঁটু বলত না, কেননা মাকড়সার ষোলোটা বৈ হাঁটু নাই।
মাকড়সানী একবারে প্রায় ছয়-সাতশো ডিম পাড়ে। তারপর সেই ডিমের চারিধারে কাপড়ের মতো ওয়াড় বুনে চমৎকার পুঁটুলি তয়ের করে। কেউ কেউ সেই পুঁটুলিটি সঙ্গে করে নিয়ে বেড়ায়, কেউ কেউ আবার কয়েকটি ছোট পুঁটুলি বানিয়ে তাদের শিকেয় ঝুলিয়ে বৈঠকখানায় রেখে দেয়। ছানাগুলি ডিম থেকে বেরিয়ে প্রথমে কিছুদিন এক জায়গায় জড়ো হয়ে থাকে। তারপর আর একটু বড় হলে তারা যে যার পথ দেখতে বেরোয়। তখন হতে আর কেউ কারও ধার ধারে না।
শুকপাখি
টিয়া, কাকাতুয়া, চন্দনা, নুরী, ফুলটুসী, ময়না, এরা সকলেই শুকপাখি। অতি প্রাচীনকাল থেকে লোকে এই পাখিকে পুষে আসছে, আর তার কত আদর করছে তার সীমাই নাই। সংস্কৃতে এই পাখির অনেক নাম আছে। খুব বুদ্ধিমান, তাই তার নাম ‘মেধাবী’; ঠোঁটটি বাঁকা তাই সে ‘বক্রচঞ্চ’ বা ‘বক্রতুণ্ড’; ঠোঁট লাল তাই ‘রক্ততুণ্ড’; দেখতে ভালো তাই ‘প্রিয়দর্শন’; সুন্দর কথা কয়, তাই ‘মঞ্জুপাঠক’; ‘কী’ এমনি শব্দ করে তাই ‘কীর’; কথা সঞ্চয় করে অর্থাৎ স্মরণ করে রাখে তাই ‘চিমি’।
ঠোঁট লাল বলে শুকের নাম ‘রক্ততুণ্ড’। এ থেকে এই মনে হচ্ছে যে, যেগুলোকে আমরা টিয়া আর চন্দনা বলি, সেগুলোই আসলে আমাদের শুক, আর গুলোর অনেকেই বিদেশ থেকে আসে। এগুলো গরম দেশের পাখি, পৃথিবীর সকল গরম স্থানেই এদের দেখা যায়। এশিয়ায় আছে, আমেরিকায় আছে, আফ্রিকায় আছে, অস্ট্রেলিয়ায় আছে।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমে যখন সাহেবরা গিয়েছিলেন তখন এই-সকল পাখির জ্বালায় তাদের চাষবাস করাই দায় হয়ে উঠেছিল। পঙ্গপালের মতো আকাশ অন্ধকার করে তারা শস্যের ক্ষেতে এসে পড়ত, আর শস্যের শীষ কেটে মুখে করে নিয়ে গাছে বসে মনের আনন্দে
উপেন্দ্র—১০৯