পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৭১

মতো জলের নিচে যাইবে। যদি নৌকায় দড়ি আটকাইয়া যায় তবে নৌকারও সেই দশা হইতে পারে। আর তিমি ডুব দিবার সময় যদি তাহার লেজের বাড়ি নৌকায় লাগে, তবে তো তাহার চুরমার হইয়া যাওয়া ধরা কথা।

 দেখিতে দেখিতে তিমি একেবারে সমুদ্রের তলায় গিয়া উপস্থিত হয়, আর এতই বেগে গিয়া উপস্থিত হয় যে তলায় ঠেকিয়া মাঝে মাঝে তাহার মাথা কাটিয়াও যায়। কিন্তু সেখানে গিয়াও আর বেশিক্ষণ থাকিবার জো নাই, আবার নিশ্বাস ফেলিবার জন্য উপরে আসিতেই হয়। নিষ্ঠুর শিকারীরাও বল্লম লইয়া প্রস্তুত থাকে, তিমি ভাসিয়া উঠামাত্রই আর-একটি বল্লম তাহার গায়ে বিঁধাইয়া দেয়, কাজেই আবার বেচারা প্রাণের ভয়ে পাগল হইয়া তলার দিকে ছোটে।

 এইরূপে একবার ভাসা, একবার ডোবা, আর ক্রমাগত বল্লমের খোঁচা খাওয়া, এমনি করিয়া বেচারা ক্রমেই কাহিল হইতে থাকে, ইহার পর তাহার মৃত্যু হইতেও আর বেশি দেরি হয় না। তখন তাহাকে টানিয়া জাহাজের কাছে আনিয়া ছুরি কোদাল দিয়া তাহার চামড়া কাটিয়া ফেলা হয়। সেই চামড়া টুকরো করিয়া পিপায় পোরা হইলে, আর একটি কাজ বাকি থাকে, তাহার কথা এখন কিছু বলা দরকার।

 তিমি এত বড় জন্তু, কিন্তু তাহার গলার ছিদ্র নিতান্তই ছোট। পুঁটি বাটার চেয়ে বড় মাছ সে গিলিতে পারে না। সে হাঁ করিয়া মাছের ঝাঁক-সুদ্ধ জল মুখের ভিতরে টানিয়া নেয়, তারপর জলটুকু ছাড়িয়া দেয়, মাছ মুখের ভিতরে আটকা পড়ে। যে তিমি লোকে শিকার করিতে যায় তাহার দাঁত নাই, তাহার জায়গায় চিরুনীর মতো একটি জিনিস থাকে। সে চিরুনীর ফাঁক দিয়া মাছ গলে না, কিন্তু জল বাহির হইয়া যায়। এই চিরুনী যে জিনিসের তৈরি, তাহাই ‘কাচকড়া’। ইহা অনেক কাজে লাগে, কাজেই ইহাতেও ঢের লাভ হয়। তিমির চামড়া তুলিয়া লওয়া শেষ হইলে, এই কাচকড়ার চিরুনীটি কাটিয়া বাহির করারও নিতান্ত দরকার। সে কাজ হইয়া গেলে আর তিমিব শরীরটা দিয়া শিকারীদের কোনো প্রয়োজন থাকে না;কাজেই তাহারা তখন সেটাকে সমুদ্রে ভাসাইয়া দিয়া অন্য শিকার খোঁজে। তারপর সেখানকার যত পাখি, যত মাছ, যত শেয়াল, যত ভাল্লুক সকলে আসিয়া মহানন্দে সেই দেহ ভোজন করে।

 এই তিমি গ্রীনল্যাণ্ড দেশের নিকটে থাকে, তাই ইহার নাম “গ্রীনল্যাণ্ড তিমি”। ররকাল (Rorqual) বলিয়া ইহাদের চেয়ে বড় আর-এক রকমের তিমি আছে, কিন্তু তাহার এত চর্বি নেই, কাচকড়াও খুব কম। তাহাতে আবার উহার স্বভাবটাও হিংস্র, নৌকাসুদ্ধ কামড়াইয়া ধরিতে চায়। কাজেই ইহাকে শিকার করিতে লোকের তত উৎসাহ নাই।


জানোয়ারের বয়স

 জানোয়ারের মধ্যে তিমি মাছ নাকি সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচে। অনেকের মতে তিমি মাছ হাজার বৎসর বাঁচে—কিন্তু কথাটা কতদূর সত্য বলা যায় না। হাতি সাধারণত একশো বৎসর বেশ বাঁচতে পারে। গ্রীক রাজা আলেক্‌জাণ্ডার যখন এসেছিলেন তখন তিনি একটা