পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

হাতি এখান থেকে নিয়ে যান। সেটা নাকি সাড়ে তিনশো বৎসর বেঁচেছিল। কচ্ছপ আর কুমির খুব অনেক দিন বাঁচে, তার অনেক প্রমাণ আছে। আমেরিকার এক চিড়িয়াখানায় এক পোষা কুমির আছে তার বয়স দু-তিনশো বৎসরের কম নয়। সে এখনো বেশ মজবুত আছে।

 প্রায় একশো বছর আগে একটা বড় কচ্ছপকে ধরে তার গায়ে তারিখ ইত্যাদি লিখে দেওয়া হয়েছিল—সেই কচ্ছপ এখনোও বেঁচে আছে। ঘোড়া তিরিশ-চল্লিশ বৎসরের বেশি বড় বাঁচে না কিন্তু উট প্রায় একশো বৎসর বেশ বেঁচে থাকতে পারে। শেয়াল, ভালুক, নেকড়ে প্রভৃতি পনেরো-কুড়ি বৎসরের বেশি সাধারণত বাঁচে না। বেড়ালেরও প্রায় ঐরকমই।

 পাখিদের মধ্যে রাজহাঁস খুব দীর্ঘজীবী—একশো বৎসর বয়সের রাজহাঁস তো দেখা গেছেই—কোনো কোনোটা নাকি তিনশো বৎসর পর্যন্ত বাঁচে! কাক, বিশেষত দাঁড়-কাক, অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচে—আশি নব্বই একশো পর্যন্ত পার হয়ে যায়। কাক যে অনেকদিন বাঁচে এই বিশ্বাস লোকের মনে বরাবরই আছে। আমরা ছেলেবেলায় ভূষণ্ডি কাকের কথা শুনেছি— সে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখে বলেছিল “এর চাইতে রামায়ণের যুদ্ধ আর দেবতা অসুরের যুদ্ধটা ভালো হয়েছিল। তখন আমি হাঁ করে কাছে বসে থাকতাম আর আপনা থেকে রক্ত এসে মুখে পড়ত!” ঈগল পাখিও প্রায় একশো বছর পর্যন্ত বাঁচে। আমরা একটা টিয়া পাখির কথা জানি সেটা প্রায় পাঁচশো বছর বেঁচেছিল।


পেঙ্গুইন পাখি

 দক্ষিণ মেরুর কাছে অনেক পেঙ্গুইন থাকে। পেঙ্গুইনদের চালচলন বড় মজার; যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলেন, ঠিক যেন মানুষের মতো। তাদের পিঠের পালক কালো, সামনের পালক সাদা,—সাদা জামার উপরে যেন কালো চোগা। এমনিতর পোশাক পরে, তারা ঠিক মানুষের মতো সোজা হয়ে চলে। দুখানি ডানা আছে বটে, কিন্তু তাতে উড়বার কাজ চলে না, কেন না তাতে পালক নেই। সাঁতরাবার সময় ডানা দুখানিতে খুব কাজ দেয়, আর ঝগড়ার সময় তা দিয়ে ঘুঁষোঘুষি করারও বিশেষ সুবিধা।

 আমাদের দেশে যখন গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ মেরুতে, পেঙ্গুইনদের দেশে তখন শীতকাল। সে বড় ভয়ানক শীত; বরফের তাড়ায় তখন মেরুর কাছে থাকবার জো নেই। কাজেই পেঙ্গুইনরাও সেই সময়টা একটু উত্তর দিক পানে এসে কাটিয়ে যায়। মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর, এ কয়মাস তাদের এমনিভাবেই চলে; আর এসময়টাতে কাজকর্মও বেশি থাকে না।

 তারপর অক্টোবর মাস এলে তাদের বসন্তকাল উপস্থিত হয়, আর তখন তাদের বাড়ির আর ঘরকন্নার কথা মনে পড়ে। তখন দেখা যায়, দলে দলে পেঙ্গুইন বরফের উপর দিয়ে দক্ষিণ মুখে রওনা হয়েছে। কেউ বেজায় গম্ভীর হয়ে পাড়াগাঁয়ের বড়লোকের মতো দুলতে দুলতে চলেছে, আবার কেউ যাচ্ছে মুখ থুবড়ে পড়ে, পিছলাতে পিছলাতে। বরফ না থাকলে তারা জলের উপর দিয়েই সাঁতরে যাবে। যেমন করেই হক, শেষটা ঠিক গিয়ে তারা