পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৭৯

গিয়াছে।

 হাতি ভারি হুঁশিয়ার জন্তু। সে জানে যে তার দেহখানি অনেক মণ ভারি, নরম জমিতে তার পা বসে যেতে পারে। তাই পথের অবস্থা ভালো মতো পরীক্ষা না করে সে কখনো চলে না। কোনো জায়গায় হুছট খেলে, সে কথা চিরকাল মনে করে রাখে। লোকে বলে, ‘হাতিরও পিছলে পা’। তার মানে এই যে নিতান্ত সতর্ক লোকেরও মাঝে মাঝে ভুলচুক হয়। হাতির পা পিছলাতে তোমরা দেখেছ? আমি দেখেছি! ভালো মতেই দেখেছি, কেননা আমরা কয়েকজন তখন তার পিঠের উপরে ছিলাম। আর, পিঠের উপরে ছিলাম বলেই, আর কতকটা অন্ধকার রাত ছিল বলেও, আসল ব্যাপারখানা যে কি হয়েছিল তা বুঝতে পারি নি। তবে, এইটুকু বলতে পারি যে হাতিটা বসে পড়েছিল, গড়ায়নি, তাই আজ এই গল্পটি তোমাদের শোনাবার অবসর পাচ্ছি। এটা যে নিতান্তই একটা হাসির ব্যাপার হয়েছিল, সে কথা তোমাদের মানতেই হবে, যদিও ঠিক সেই সময়টাতে আমাদের আদপেই সে কথা খেয়াল হয় নি।

 আর হাসির ব্যাপার হয়, যখন কপিকল দিয়ে হাতিকে জাহাজে তোলে। শূন্যে লটকে থাকতে আমার তেমন ভালো লাগে না, এ কথা আমি সরলভাবে বলছি। হাতি নাকি তখন বড্ড বেজায় রকমের চ্যাঁচায়, তা ছাড়া আরো অনেক কাজ করে তার কথা লেখার দস্তুর নাই।

 আর হাসির কাণ্ড হয়, হাতি যখন হাঁচে। এক-একটা মানুষের হাঁচি শুনে চল্লিশ হাত দূরে থেকে চমকে উঠতে হয়, হাতির হাঁচির তো কথাই নাই। হাঁচবার আগে সে কেমন একটু ব্যস্ত আর জড়সড় হয়, তারপর একবাব চ্যাঁচায়, তারপর হাঁচে। তখন যে তার অর্থ বোঝে সেও ভারি আশ্চর্য হয়, আর যে বোঝে না, তার তো প্রাণ-ই উড়ে যায়।

 হাতি ভারি বুদ্ধিমান; মাহুতের কত কথাই তার বুঝে চলতে হয়। ‘বৈঠ্‌’ বললে বসে, ‘ধৎ’ বললে থামে, ‘মাইল’ বললে দাঁড়ায়; (আর খুব হুঁশিয়ার হয়), ‘দেলে’ বললে ধরে, ‘ভরি’ বললে ছাড়ে; ‘পিচ্ছো’ বললে হটে; ‘জুগ্‌’ বললে মাথা নোয়ায়; ‘থৈরে’ বললে শোয়; ‘হৈ’ বললে সরে; ‘বোল্‌’ বললে চ্যাঁচায়, ‘ডোগ্‌’ বললে ডিঙ্গায়; ‘মার’ বললে মারে।

 আশ্চর্যের কথা এই যে, অত বড় জানোয়ার এতটুকু মানুষের ধোকায় পড়ে কেন এত নাকাল হতে যায়? ওকে যে ফাঁকি দিয়ে ধরে, তার কথা শুনলে হাসিও পায়, দয়াও হয়। দুঃখের বিষয়, আজ আর সে কথার জায়গা নাই।


জানোয়ার ডাক্তার

 একজন লোক শিকার করতে গিয়েছিল, বনের ভিতরেই তার রাত হয়ে গেল। তখন সে আর বাড়ি ফিরবার পথ না পেয়ে, একটা গাছে উঠে বসে রইল। খানিক বাদে সেখানে একটা প্রকাণ্ড সাপ এসে একটা হাতিকে ধরে গিলে ফেলল। হাতি খেয়ে তার পেট এমন ভারি হল যে আর সে ভালো করে চলতেই পারে না। তখন সে অনেক কষ্টে একটা গাছের কাছে গিয়ে তার একটুখানি ছাল খুঁটে খেল, আর অমনি দেখা গেল যে, হাতিটাতি সব হজম হয়ে তার পেট আবার কমে গিয়েছে।