পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৮১

 এতে জানোয়ারদের ওষুধ জানার কথা প্রমাণ হয় কিনা, সে কথা ভেবে আমাদের দরকার নাই; কিন্তু অনেক জানোয়ার যে ওষুধের মর্ম বোঝে, এর পরিচয় তাদের কাজেই পাওয়া যায়। একবার একটা কুকুরের পা ভেঙ্গে যায়, এক ডাক্তার তাতে পটি বেঁধে ওষুধ লাগিয়ে সারিয়ে দেন। তারপর একদিন ডাক্তার দেখলেন যে সেই কুকুর আরেকটা কুকুরকে নিয়ে তাঁর কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে, সেটারও একটা পা ভাঙ্গা।

 একটি ভদ্রলোক আমাকে একটা বানরের গল্প বলেছিলেন, সে একটা হাসপাতালের কাছে থাকত। হাসপাতালের রোজ ডাক্তার আসেন, রোগীরা গিয়ে তাঁকে হাত দেখায়, বানরটা তার সবই দেখে নিয়েছে। তারপর একদিন আর রোগীর সঙ্গে সেও গিয়ে ডাক্তারবাবুর সামনে তার হাতখানি বাড়িয়ে দিল। ডাক্তারবাবু দেখলেন, সত্যি সত্যি তার অসুখ হয়েছে!

 আর-এক ডাক্তার সাহেবের পোষা বানরের গল্প পড়েছিলাম, সে রোজ দেখত সাহেব একটা টেবিলের উপরে মড়া রেখে অস্ত্র দিয়ে কাটেন তারপর আরেকদিন সাহেব সেই টেবিলের কাছে আসতেই বানরটা তাকে তার উপর চিৎ করে ফেলে চেপে ধরল। সে এমনি বেজায় ষণ্ডা বানর যে সাহেব কিছুতেই হাত ছাড়িয়ে টেবিল থেকে উঠতে পারলেন না। টেবিলের কাছেই সাহেবের অস্ত্রের ব্যাগ; বানরটা ক্রমাগতই হাত বাড়িয়ে সেইটে আনবার চেষ্টা করছে, কিন্তু অল্পের জন্য নাগাল পাচ্ছে না। বেগতিক দেখে সাহেব চ্যাঁচাতে লাগলেন, আর তা শুনে লোকজন ছুটে এসে তাঁকে বাঁচাল, নইলে সেদিন বানর দেখে নিত, তাঁর পেটের ভিতর কি আছে!

 কুকুর যে তার ঘা চাটে সেও একরকম ডাক্তারি বলতে হবে। আমাদের কুকুর ছানাটার কানে ঘা হয়েছিল; তার মা রোজ বসে সেই ঘা চাটত। অবশ্য আমরাও ওষুধ দিতাম। তাতেই ঘা সারল, না, চাটাতে সারল, সে কথা বলতে পারি না।

 বাঘের ঘা হলে নাকি সে নানান জিনিস দিয়ে তার ভিতর গুঁজতে থাকে, আর তাই নাকি তার ঘাও সারে না। এটা ডাক্তারির সামিল কিনা, সে কথা বলা একটু শক্ত। আর কাচপোকা যে হুল ফুটিয়ে আরশুলাকে অবশ করে, তাকেও ডাক্তারি না বলে বরং ডাকাতি বলাই ভালো।


জার্মানের কুকুর

 আজকালকার ভীষণ গোলাগুলির সামনে খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করা বড়ই কঠিন কাজ। আজকালকার সৈন্যেরা প্রায়ই গর্তের ভিতর থেকে যুদ্ধ করে। একদল ফরাসী সৈন্য তাদের গর্তে বসে আছে, জার্মানরা দল বেঁধে তাদের মারতে আসছে। আর-একদল ফরাসী সৈন্য একটা বনের ভিতরে থেকে ‘লাখমারী’ বন্দুক দিয়ে সেই জার্মানগুলোকে তাড়াচ্ছে।

 'লাখমারী’ বন্দুক দিয়ে ভয়ানক তাড়াতাড়ি গুলি ছোঁড়া যায়। এসব বন্দুকের ইংরাজী নাম হচ্ছে “Mitrailleuse”। এর কোনো বাংলা নাম নাই; কিন্তু লাখমারী বললে বোধহয় তোমরা সকলেই বুঝতে পারবে।

 যা বলছিলাম। জার্মানরা লাখমারীর গুলিতে জ্বালাতন হয়ে ভাবল যে ওগুলোকে ঐ বন থেকে দূর করতে না পারলে চলছে না। তাই দুপুর রাতে ভয়ানক অন্ধকারের মধ্যে তাদেরউপেন্দ্র-১১১