পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

প্রাচীনকালের জন্তু

 শ্রীযুক্ত এইচ্‌, এন, হচিন্‌সন্‌ কৃত “Extinct Monsters” নামক পুস্তক হইতে ইণ্ডয়ানোডোনের আবিষ্কারের নিম্নলিখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সংগ্রহ করা গেল।

 ১৮২২ সালে ডাক্তার জি, এ, ম্যাণ্টেলের সহধর্মিনী ইংলণ্ডের অন্তঃপাতি টিল্‌গেট্‌ ফরেষ্ট্‌ নামক স্থানের প্রস্তরে এই জন্তুর একটি দন্ত প্রাপ্ত হন। তৎপর তাঁহারা স্বামী-স্ত্রীতে অনুসন্ধান করিয়া ঐরূপ আরো অনেকগুলি দন্ত বাহির করেন। এ সকল দন্তের অনেকগুলিরই অগ্রভাগ পুনঃ পুনঃ চর্বণজনিত ঘর্ষণে মসৃণ হইয়া গিয়াছে। গো মহিষাদি শষ্পাহারী স্তন্যপায়ী জন্তুদিগেরই কেবল ঐ রূপ দন্ত দেখা যায়; সুতরাং ঐ দন্ত যে জাতীয় জন্তুর, তাহারা যে শষ্পাহারী ছিল, এবং খাদ্য দ্রব্যকে চর্বণ করিত, তাহাতে কোন সন্দেহ রহিল না। কিন্তু এই সন্দেহের অভাবই আর এক গুরুতর সন্দেহের কারণ হইয়া উঠিল। যে প্রস্তরে ঐ সকল দন্ত পাওয়া গিয়াছিল, তাহা সরীসৃপ যুগের প্রস্তর। অর্থাৎ ঐ সময়ের প্রস্তরে সরীসৃপ জাতীয় জন্তুর চিহ্নই পাওয়া যায়; পৃথিবীতে তখনও স্তন্যপায়ী জন্তুর সৃষ্টি হয় নাই। সরীসৃপেরা কখনও তাহাদের খাদ্য চর্বণ করিয়া আহার করে না, তাহদের আহার কেবল গলাধঃকরণ। সুতরাং ডাক্তার ম্যাণ্টেল ঐ দাঁতগুলিকে লইয়া বিষম সমস্যায় পতিত হইলেন। উহাদিগকে সরীসৃপের দন্ত বলিতে ভরসা হইতেছে না, কারণ সরীসৃপদিগকে কখনও চর্বণ করিতে দেখেন নাই। দাঁতগুলি দেখিতে কোন বৃহৎকায় স্থূলচর্মী চর্বণকারী জন্তুর দাঁতের মতন। কিন্তু ঐরূপ চর্বণকারী জন্তুরা আজকাল সকলেই স্তন্যপায়ী অথচ সে সময়ে স্তন্যপায়ী ছিল না।

 এরূপ অবস্থায় ডাক্তার ম্যাণ্টেল অদ্বিতীয় পণ্ডিত কুভিয়ের শরণাপন্ন হইলেন। কুভিয়ে ঐ দন্ত দেখিয়াই বলিলেন যে উহা গণ্ডারের দাঁত! ইহার কিছুদিন পরে ঐ সকল প্রস্তরে জন্তুবিশেষের পায়ের হাড় কয়েকখানা পাওয়া গেল। ঐ হাড় দেখিয়া কুভিয়ে বলিলেন যে উহা গণ্ডারের খড়গ। যে প্রস্তরে কোনদিন কোনরূপ স্তন্যপায়ী জন্তুর চিহ্ন পাওয়ার কথা শোনেন নাই, তাহাতে হঠাৎ এতগুলি স্তন্যপায়ীর সমাবেশ ডাক্তার ম্যাণ্টেলের মনে স্বভাবতঃই কিঞ্চিৎ সন্দেহজনক বলিয়া বোধ হইল। সুতরাং তিনি শ্রমজীবীদিগকে পুরস্কার দানে উৎসাহিত করিয়া বিশেষভাবে অনুসন্ধানে নিযুক্ত করিলেন। ইহার ফলস্বরূপ অনেকগুলি নিখুঁত দন্ত আবিষ্কৃত হইল। তখন দেখা গেল যে ঐ সকল দন্তের আকৃতি বর্তমান সময়ের ইণ্ডয়ানা নামক গোধিকার দন্তের ন্যায়।

 ডাক্তার ম্যাণ্টেলের প্রথমাবধিই বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে প্রাচীনকালে চর্বণকারী শষ্পাহারী সরীসৃপ ছিল, এ সকল দন্ত তাহাদেরই। সুতরাং ইণ্ডয়ানার দন্তের সহিত ঐ সকল দন্তের উক্তরূপ সাদৃশ্য দেখিয়া তাঁহার সে বিশ্বাস দৃঢ়তর হইল। (ইণ্ডয়ানা কীট এবং বৃক্ষপত্রাদি ভক্ষণ করে। কিন্তু তাহা সে কেবল গলাধঃকরণই করিয়া থাকে, চর্বণ করে না।) কিন্তু দেশীয় অন্যান্য পণ্ডিতেরা কেহই ডাক্তার ম্যাণ্টেলের মতের সমর্থন করিলেন না।

 যাহা হউক, ঐ নূতন দন্তগুলি দেখিয়া কুভিয়ে তাঁহার ভ্রম বুঝিতে পারলেন, এবং মহাজনোচিত সরলতা সহকারে তাহা স্বীকার করিলেন। ডাক্তার ম্যাণ্টেল্‌কে তিনি লিখিলেন