পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৯৩

যে ঐরূপ দাঁত তিনি পূর্বে কখনও দেখেন নাই। তিনি ইহারও বলিলেন যে “এতদ্দ্বারা একটি নূতন জন্তুর আবিষ্কার হইল—শষ্পাহারী সরীসৃপ।”

 বন্ধুদিগের পরামর্শে ডাক্তার ম্যাণ্টেল এই নূতন জন্তুর “ইণ্ডয়ানোডন” নামকরণ করিলেন অর্থাৎ ইণ্ডয়ানার মতন দন্তবিশিষ্ট জন্তু। এইরূপ দন্তের লক্ষণানুসারে জন্তুর নামকরণ প্রত্নপ্রাণীবিদ্যা শাস্ত্রে বিরল নহে। প্রাচীনকালের অনেক জন্তুর নামকরণ এইরূপে হইয়াছে। যে জন্তুর ইণ্ডয়ানার ন্যায় দন্ত, তাহার নাম ইণ্ডয়ানোডন। যাহার স্তনের ন্যায় দন্ত, তাহার নাম ম্যাস্টোডন (ম্যাস্টস্‌ শব্দে গ্রীক ভাষায় স্তন বুঝায়)। যাহার যাঁতার ন্যায় দন্ত, তাহার নাম মাইলোডন্‌ (মাইলস্ = যাঁতা)। যাহার দন্তের গঠন অত্যন্ত জটিল, তাহার নাম ল্যাবিরিন্থোডন (ল্যাবিরিন্থস = গোলোক ধাঁধা) যাহার দন্তের আকৃতি ঘরের চালের ন্যায, তাহার নাম স্টিগোডন (স্টিগস্‌ = চাল) ইত্যাদি।

 যাহা হউক, আমরা ইণ্ডয়ানোডনের বিবরণ এখনও শেষ করি নাই। এই জন্তুর আবিষ্কারের ইতিবৃত্ত পাঠ করিলে একদিকে যেমন এই কথা জানা যায় যে পণ্ডিতেরাও অনেক সময় ভুল করেন, অপরদিকে তেমনি ইহাও প্রমাণ হয় যে সদ্‌যুক্তির সাহায্যে অতি সামান্য পদার্থ হইতেও মূল্যবান্‌ সত্য সংগ্রহ করা যায়।

 ঐ দাঁতগুলির সহিত অনেক হাড় পাওয়া গিয়াছিল। সুতরাং ইহা স্বভাবতঃই অনুমিত হইল যে দাঁত যাহার, হাড়ও তাহারই। এক এক-খানি উরুর হাড় একগজেরও অধিক দীর্ঘ। বর্তমান সময়ের কুম্ভীর গুলির দেহের ঐ হাড় এক ফুটের অধিক লম্বা হয় না। সুতরাং জন্তুটি যে অতিশয় বৃহৎ ছিল, তাহা সহজেই বুঝা গেল। ইহার কয়েক বৎসর পরে জর্মনি দেশে অন্য এক জাতীয় অনেকগুলি ইণ্ডয়ানোডনের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। এই জাতীয় ইণ্ডয়ানোডন প্রথমোক্ত ইণ্ডয়ানোডন অপেক্ষাও বৃহৎ। প্রথমোক্ত ইণ্ডয়ানোডনগুলি প্রায় ২৪ ফুট লম্বা হইত কিন্তু শেষোক্তগুলি ৩০ ফুটের কম হইত না।

 ডাক্তার ম্যাণ্টেল যে স্থানে সেই দাঁত এবং হাড়গুলি পাইয়াছিলেন, সে স্থানে একপ্রকার বৃহৎ জন্তুর পদচিহ্নও দৃষ্ট হয়। ঐ পদচিহ্নও যে ইণ্ডয়ানোডনের তাহাতে সন্দেহ করিবার বিশেষ কারণ ছিল না। এবং কিছুদিন পরে যখন ঐ জন্তুর আরও অস্থি পাওয়া গেল, তখন দেখা গেল যে উহা যথার্থই ইণ্ডয়ানোডনের পদচিহ্ন।

 এই পদচিহ্ন দেখিলে স্পষ্টই বুঝা যায় যে ইণ্ডয়ানোডন্‌ পক্ষীর ন্যায় পশ্চাতের পদদ্বয়ে ভর করিয়া চলিয়া বেড়াইত। সম্মুখের পা দুখানিকে সে মৃত্তিকা স্পর্শ করিতে দিত না। দিলে, তাহাদেরও চিহ্ন অবশ্য দেখা যাইত; কিন্তু ওরূপ চিহ্ন কেহ দেখিতে পায় নাই। পশ্চাতের পদদ্বয় এবং কটিদেশের গঠন অনেকাংশে পক্ষীর ঐ সকল অঙ্গের গঠনের অনুরূপ ছিল।

 এইরূপে ক্রমে এই অদ্ভুত জন্তুর সম্বন্ধে সকল কথাই পরিষ্কার হইয়া আসিল। বাকি রহিল কেবল সেই শৃঙ্গাকৃতি অস্থিখণ্ড, যাহাকে কুভিয়ে প্রথমতঃ গণ্ডারের খড়গ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছিলেন। ডাক্তার ম্যাণ্টেল বলিলেন যে উহা ইণ্ডয়ানোডনের শৃঙ্গ। কিন্তু পণ্ডিত ওয়েন নানা কারণে উহাকে শৃঙ্গ বলিয়া স্বীকার করিতে প্রস্তুত হইলেন না। তিনি বলিলেন যে উহা তাহার হাতের কিছু হইবে। বাস্তবিককালে এই জন্তুর অক্ষুন্ন কঙ্কাল আবিষ্কৃত হইলে দেখা গেল যে ওয়েনের কথাই ঠিক। ঐ জিনিসটা ইণ্ডয়ানোডনের হস্তের অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ।