পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

হইল। ছোট কুমীরটা ভারি ব্যস্ত হইয়া যেই সেটাকে মুখে লইয়াছে, অমনি বড় কুমীরটা তীরের মতন ছুটিয়া তাহাতে ভাগ বসাইতে আসিল। এরপর কিছুকাল তাহারা জলের নীচে কাড়াকড়ি করিতে লাগিল। খানিক পরে একটাই ভাসিয়া উঠিল; তখন দেখা গেল, যে সে ভেড়ার কতকটা মুখে করিয়া লইয়া আসিয়াছে। সেটুকু খাওয়া হইলে সে আবার ডুব দিল, আর আবার নুতন করিয়া যুদ্ধ আরম্ভ হইল। সেই যুদ্ধের চোটে ছোট পুকুরটি তোলপাড় হইয়া উঠিল, তাহার জল কাদায় ঘোলা আর রক্তে লাল হইয়া যাইতে লাগিল। দর্শকদের উৎসাহের কথা বুঝাই যায়। ভেড়া শেষ হইয়া গেলে, দুইটাতে পুকুরের দু জায়গায় ভাসিয়া উঠিল। তখন দেখা গেল, যে ছোট কুমীরটার গলায় ভয়ানক একটা গর্ত, আর বড় কুমীরটার সামনের পা একেবারে চৌচির। তাহাদের রক্তে জল লাল হইয়া যাইতেছে; কিন্তু বেশী কিছু কষ্ট যে তাহাদের হইতেছে, এইরূপ বোধ হইল না।

 এরপর আর একটা ভেড়া আনিয়া জলে ফেলা হইল; সুতরাং যুদ্ধও আবার আরম্ভ হইল। এবারে যুদ্ধ বেশীক্ষণ থাকিল না; কারণ ভেড়াটা এত পচা ছিল যে সহজেই ছিঁড়িয়া গেল। সেদিনকার তামাসা এই পর্যন্ত। পরদিন বাঘে কুমীরে লড়াই। বাঘটা একটা প্রকাণ্ড চিতা বাঘ। সেই আগের দিনের দুটা কুমীরের সঙ্গে তার লড়াই হইবে। ছোট কুমীরটাকে দেখিয়াই বোধ হইল, যে আগের দিনের সেই গলার আঘাতে সে বড়ই কাবু হইয়াছে—যুদ্ধের মেজাজ তাহার একেবারেই নাই।

 বাঘটাও যেন কুমীর দেখিয়া একটু ভয় পাইয়াছে। সে সহজে খাঁচার বাহিরে আসিতে চায় না। —তাহাকে খোঁচাইয়া বাহির করিবার দরকার হইল। বাহিরে আসিয়া সে একবার কুমীরের কাছে যায়—আর এক একবার ওৎ পাতিবার যোগাড় করে—আবার ভয় পাইয়া থামে। বাঘটা বেশী কাছে আসিলে কুমীর গুলা একটু একটু লেজ নাড়ে। এমন সময় কতকগুলি পট্‌কায় আগুন ধরাইয়া বাঘের পিছনে ফেলিয়া দেওয়া হইল।

 পট্‌কার শব্দে বাঘটা চম্‌কাইয়া আর চটিয়া এক লাফে গিয়া ছোট কুমীরটার উপরে পড়িল। সে বেচারা আগে হইতেই কাবু হইয়া আছে, সুতরাং তাহার গলার দাঁত বসাইয়া তাহাকে মারিতে বাঘের কিছুই মুশকিল হইল না।

 তিন দিন যাবৎ বাঘটা কিছু খাইতে পায় নাই; ক্ষুধায় সে আগেই গরম হইয়াছিল। এর উপরে এখন রক্তের লোভ পাইয়া সে আরো খেপিয়াছে; আবার একটা কুমীরকে এত সহজে মারিয়া তাহার ভয়ও ভাঙ্গিয়াছে। সুতরাং সে ইহার পরেই লাফাইয়া বড় কুমীরটার ঘাড়ে পড়িতে গেল। কিন্তু বড় কুমীরটা ভয়ানক তাড়াতাড়ি মাথা সরাইয়া নেওয়াতে, বাঘ ত তাহার ঘাড়ে পড়িতেই পাইল না, বরং বাঘ সাম্‌লাইয়া উঠিবার আগেই কুমীর তাহার মাথাটি কামড়াইয়া ধরিল। ইহার পর এক পালোয়ান বল্লম দিয়া কুমীরটাকে মারিয়া ফেলিল।

 আর একবার একটা বড় বাঘ আর একটা মহিষে যুদ্ধ হইয়াছিল। মহিষটা প্রকাণ্ড আর ভয়ানক রাগী। মুহূর্তের মধ্যে সে বাঘ মহাশয়কে তাড়াইয়া কোণঠাসা করিল। বাঘ তখন আর কি করে, লাফাইয়া মহিষের ঘাড়ে পড়া ভিন্ন তাহার অন্য উপায় নাই। সে মহিষের ঘাড়ে পড়িয়া আঁচড় কামড়ে তাহাকে ক্ষত বিক্ষত করিয়া ফেলিল, কিন্তু মহিষের তাহাতে গ্রাহ্য নাই। সে এমনি জোরে এক ঘা ঝাড়া দিল যে, বাঘ আছাড় খাইয়া মাটিতে পড়িয়া অজ্ঞান হইয়া গেল;আর মহিষ শিঙের গুঁতায় তাহার নাড়িভূঁড়ি বাহির করিয়া দিল। যতক্ষণ