পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯০৩

 খেলা শেষ হইলে দুই বন্ধু একটা টেবিলে বসিয়া কিছু জলযোগ করিতেছেন, এমন সময় সেই ফরাসীদের মধ্য হইতে খুব একটা লোক আসিয়া স্যাণ্ডোর সঙ্গে ঝগড়া বাধাইল।

 স্যাণ্ডো প্রথমে খুব শান্তভাবে উত্তর দিতেছিলেন। এমন কি দুবার চড় খাইয়াও তিনি সহ্য করিয়াছিলেন এবং তাহার বন্ধু তাঁহার পক্ষ অবলম্বন করিতে চাহিলে, তিনি হাতে ধরিয়া তাহাকে বারণ করিয়াছিলেন। স্যাণ্ডো অবশ্য খুব স্নেহের সহিতই বন্ধুর হাত ধরিয়াছিলেন, কিন্তু সেই ধরাতেই বন্ধুর হাতখানি ভাঙ্গিয়া যাইবার যোগাড় হইয়াছিল। তিনি তখন বুঝিতে পারিলেন, যে স্যাণ্ডো আর এখন সে লোক নহেন।

 সেই ফরাসী কিন্তু স্যাণ্ডোর শান্তভাব দেখিয়া ক্রমেই চটিতেছিল। শেষটা তাহাকে নাকে এমনি এক কীল মারিল যে, নাক দিয়া রক্ত পড়িতে লাগিল। তাহার ধাক্কায় টেবিলে প্লেট হইতে ঝোল পড়িয়া স্যাণ্ডোর সবে সেইদিন পরা নূতন সুটটি মাটি হইয়া গেল। এমন অবস্থায় কাহার না রাগ হয়? স্যাণ্ডোও ত মানুষ। সুতরাং তিনি আস্তে আস্তে উঠিয়া ফরাসীর ঘাড় আর এক হাতে তাহার দুই-পা ধরিয়া তাহাকে মাটি হইতে তুলিলেন। তারপর তাহার হাঁটু আর মাথায় ঠোকাঠুকি করিয়া তাহাকে টেবিলে আছড়াইয়া ফেলিলেন। সেই আছড়ে টেবিলের চাল ভাঙ্গিয়া ফরাসী ভায়া মেঝেতে পড়িয়া অজ্ঞান হইয়া রহিল। দেড়দিন সে স্বাসপাতালে এই অবস্থায় ছিল। অবশ্য এই ঘটনায় স্যাণ্ডোকে পুলিশে যাইতে হইয়াছিল। প্রথমে একটা পুলিশ তাহাকে ধরিতে আসিলে, হোটেলের লোকেরা তাহাকে বলিল যে, “আরো জনকতক সঙ্গে করিয়া আইস, এ বড় ভয়ানক লোক।” যাহা হউক স্যাণ্ডো থানায় যাইতে কোন আপত্তি করিলেন না। স্যাণ্ডোর সঙ্গে তাহার বন্ধু এবং সেই ফরাসীর বন্ধুরাও গেল। এই ঘটনায় স্যাণ্ডোর কোন দোষ ছিল না আগাগোড়াই সেই ফরাসীর দোষ, একথা সেই বন্ধুরা থানার লোকদিগকে বলাতে, তাহারা সহজেই স্যাণ্ডোকে ছাড়িয়া দিল।

 স্যাণ্ডোর রাগ থামিয়া গেলে পর, সেই লোকটাকে এত আঘাত দিয়াছেন বলিয়া, তাহার মনে খুব ক্লেশ হইতে লাগিল। তিনি তাহাকে হাসপাতালে দেখিতে গেলেন। কিন্তু সে তাহার সহিত দেখা করিতে চাহিল না।

 প্যারিসের সেই ঘটনার কিছুদিন পরে স্যাণ্ডো লণ্ডনে আসিলেন। সেখানে এক রাত্রিতে তিনি তামাসা দেখাইতেছেন, এমন সময় একটি ভদ্রলোক তাহার সহিত দেখা করিবার প্রার্থনা জানাইলেন। ভদ্রলোকটিকে কোথায় দেখিয়াছেন বলিয়া স্যাণ্ডোর মনে হইল, কিন্তু ঠিক চিনিতে পারিলেন না। ভদ্রলোকটি অনেক সৌজন্য দেখাইয়া কিছু জলযোগের জন্য স্যাণ্ডোকে নিয়া এক হোটেলে গেলেন। তখন ভদ্রলোকটি বলিলেন, “মিস্টার স্যাণ্ডো, বোধহয় আমাকে চিনিতে পারেন নাই?” স্যাণ্ডো বলিলেন, “না মহাশয়।”

 তখন ভদ্রলোকটি বলিলেন, “চিনিলে হয়ত আমার সঙ্গে কথাই কহিতেন না।” ক্রমে জানা গেল, যে সেই ভদ্রলোক আর কেহ নহেন, সেই প্যারিসে স্যাণ্ডো যাহাকে ঠেঙ্গ ইয়াছিলেন, তিনিই। তিনি বলিলেন, “আমি আমার বন্ধুদের মধ্যে সকলের চাইতে ষণ্ডা। কিন্তু আমি কি জানিতাম, যে আপনি স্যাণ্ডো। তাহা হইলে কি আর আমি আপনার সঙ্গে ওরকম ব্যবহার করি।” এইরূপ কথাবার্তার পর ভদ্রলোকটি সেইখানে স্যাণ্ডোর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করিলেন, এবং তাহার নিদর্শনস্বরূপ স্যাণ্ডোকে ১৫০০ টাকা মূল্যের একটি সোনার ঘড়ি উপহার দিলেন।